ফেসবুক, টুইটার ও গুগলের শীর্ষ নির্বাহীরা তোপের মুখে

0 241
ফেসবুক, টুইটার ও গুগলের শীর্ষ নির্বাহীরা তোপের মুখে

গুগল, ফেসবুক ও টুইটারের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভুয়া খবর প্রচারের জন্য।

মার্কিন কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত এক শুনানিতে টেক জায়ান্টগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের প্রতি এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

আইনপ্রণেতারা মনে করেন, থার্ড পার্টির দ্বারা প্রচারিত পোস্টগুলোর দায়বদ্ধতা থেকে অনলাইন প্লাটফর্মগুলো মুক্তি পেতে পারে এমন আইন সংস্কার করা প্রয়োজন।

মার্কিন কংগ্রেসের কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মাইক ডয়েল নির্বাহীদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন,

ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে সংঘটিত ঘটনার জন্য তারা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন কিনা। এ সময় তিন নির্বাহীর কেউই কোনো উত্তর প্রদান করেননি।

পাশাপাশি প্লাটফর্মগুলোকে চিহ্নিত ১২ জন কভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিরোধীর করা পোস্টও সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন ডয়েল।

এ সময় ওয়েবসাইট প্রকাশকদের বিভিন্ন থার্ড পার্টি কনটেন্টের দায়বদ্ধতা থেকে আইনিভাবে মুক্তি দেয়া সংক্রান্ত ‘ধারা-২৩০’ বিলুপ্ত করার প্রস্তাবও দেয়া হয় কংগ্রেসে।

শুনানিতে জাকারবার্গ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কংগ্রেসের উচিত নির্দিষ্ট ধরনের কনটেন্টের জন্য প্লাটফর্মগুলোকে মধ্যস্থতাকারীর দায়বদ্ধতা থেকে সুরক্ষা দেয়া।

পাশাপাশি এ ধরনের কনটেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।

জাকারবার্গ জানান, ব্যবহারকারীরা এসব হিংসাত্মক কনটেন্টগুলো খুব কমই দেখতে পান। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীরা তাদের নিউজ ফিডের মাত্র ৬ শতাংশ রাজনৈতিক পোস্ট দেখতে পারেন।

পাশাপাশি হিংসাত্মক কনটেন্টগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাকারবার্গ তার দলের প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন।

জাকারবার্গ জানান, ভুয়া খবর প্রতিরোধে ফেসবুক ৮০টি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। পাশাপাশি অন্তত কভিড-১৯ সংক্রান্ত ১ কোটি ২০ লাখ ভুয়া তথ্য সংক্রান্ত পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে।

গুগলের শীর্ষ নির্বাহী সুন্দর পিচাই বলেন, গত বছর মার্কিন নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভুল তথ্য সরবরাহ বন্ধ করতে ইউটিউব যথেষ্ট সচেতন ছিল। পাশাপাশি কভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্যগুলো ইউটিউবের হোমপেজে অন্তত ৪০ হাজার কোটি বার দেখা হয়েছে।

এ সময় ‘ধারা-২৩০’ বিলুপ্তির প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, এমন করা হলে মুক্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে প্লাটফর্মগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

টুইটারের শীর্ষ নির্বাহী জ্যাক ডরসি বলেন, ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইটি বিশ্বাস অর্জনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ব্যবহারকারীদের কাছে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও

গোপনীয়তা জোরদারের মাধ্যমেই এটি অর্জন করা যায়। এ সময় ভুল তথ্য প্রতিরোধে টুইটারের প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

ডরসি জানান, টুইটারের বার্ডওয়াচ টিমের দুই হাজার কর্মী বিভিন্ন ভুল তথ্য-সংক্রান্ত টুইটগুলো চিহ্নিত করছে এবং সেগুলোতে নোট সংযুক্ত করে দিচ্ছে।

এছাড়াও মাইক্রোব্লগিং সাইটটির ব্লু-স্কাই টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি করছে।

২৫ মার্চ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে শীর্ষ তিন নির্বাহী কংগ্রেসের দুটি উপকমিটি ও এনার্জি অ্যান্ড কমার্স কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন।

মূলত মার্কিন ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার ঘটনায় এ শুনানির আয়োজন করা হয়।

শুনানিতে মাইক ডয়েল বলেন, প্লাটফর্মগুলোর নিজস্ব আইন ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আমাদের এখন থেকে ভুল তথ্য ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পরিচালনা নীতি পরিবর্তন করতে হবে।

বৃহস্পতিবারের এ শুনানিতে ভুল তথ্য ছড়ানোর দায়ে আইনপ্রণেতারা এ শীর্ষ তিন নির্বাহীর প্রচুর সমালোচনা করেন।

ওয়াশিংটনের ক্যাপিটলে সংঘটিত হামলা টেক জায়ান্টদের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। হামলার জের ধরে ট্রাম্পের ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।

তবে অনেকে মনে করেন নির্বাচন নিয়ে ভুয়া খবরগুলোকে ছড়াতে সাহায্য করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং গ্রুপ ফুলফ্যাক্ট জানায়, মার্কিন নির্বাচনে দেখা গিয়েছে ভুল তথ্য কীভাবে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। আমরা দেখতে পেরেছি এসব ভুল তথ্য সহিংসতা ও গণতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.