কবে চালু হচ্ছে ফেসবুক ‘বলা যাচ্ছে না’ !
বাংলাদেশের টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ তিন দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুককে বন্ধ রাখার পর সংস্থাটি এখন বলছে, কবে তা খুলে দেয়া হবে তা ‘বলা যাচ্ছে না’।
ফেসবুকের তরফ থেকে শনিবারই বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে তাদের একাধিক সেবা সীমিত করার বিষয়ে অবগত আছে তারা, বিষয়টি তারা বোঝার চেষ্টা করছে এবং আশা করছে দ্রুতই তাদের পূর্ণাঙ্গ সেবা আবার সচল হবে।
তবে এর পর দুদিন পরেও পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি। অনেকেই ফেসবুকে লগইন করতে পারছেন না। যাদের লগইন করা আছে তারা পাচ্ছেন না কোনো আপডেট। ভালোভাবে কাজ করছে না মেসেঞ্জার সেবাও।
এমনকি কোথাও কোথাও উচ্চগতির ইন্টারনেটের গতিও কমিয়ে রাখা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও অনলাইন-ভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
কেন ফেসবুক ও ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত করা হচ্ছে তার কারণ খোলাসা না করলেও বাংলাদেশ টেলিকম্যুনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে ফেসবুক বন্ধ রাখা হয়েছে’।
কিন্তু এমন সময়ে ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছিল, যেদিন দুদিনের সফরে বাংলাদেশ এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার এই সফরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস বিক্ষোভ হচ্ছে। সহিংসতায় তিন দিনে অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
যদিও সবচেয়ে সহিংসতা হয়েছে দুটি এলাকায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারির পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানাচ্ছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।
কিন্তু তারপরও কবে-কখন ফেসবুক ব্যাবহারের উপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করছে না বিটিআরসি।
সুব্রত রায় বলছেন, ‘চালু করার বিষয়ে দিন-ক্ষণ কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে ইন্টারনেটের গতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নেটব্লক্স টুইট করে বলছে, বাংলাদেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবাও অনেক এলাকায় বন্ধ রয়েছে।
অবশ্য ফেসবুক বন্ধ করা হলেও ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে অনেক বাংলাদেশী ফেসবুক ব্যাবহার করছেন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা-সমালোচনাও চলছে। অনেকেই বিভিন্ন ধরণের স্ট্যাটাস দিয়ে জানাচ্ছেন যে ভিপিএনের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করছেন তারা।
এমনকি রোববারও অনেক ব্যাবহারকারীকে দেখা যাচ্ছে ভিপিএন ব্যাবহার করে হেফাজতে ইসলামের হরতাল কর্মসূচি নিয়ে ফেসবুক লাইভ করতে।
এদিকে ফেসবুক বন্ধ থাকার কারণে আর্থিক ও ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনাকারী উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, ফেসবুক বন্ধ থাকায় অর্ডার কমে গেছে তাদের।
করোনাভাইরাস মহামারী সঙ্কটের সময় পুঁজি কমে যাওয়ায় অনেকেই ফেসবুককেই ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আবার অনেকের জন্য ব্যবসা পরিচালনার একমাত্র মাধ্যমই ফেসবুক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী উদ্যোক্তা, যিনি ফেসবুকে একটি পেইজের মাধ্যমে হাতে আঁকা ছবি, আয়না ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন, তিনি বলছিলেন, ফেসবুক বন্ধ থাকার কারণে ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি।
তিনি বলেন, তার এলাকায় ভিপিএনও কাজ করছে না। যার কারণে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রয়েছেন তিনি।
এই উদ্যোক্তা জানান, এর আগে যারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছে সেসব নম্বরে অনেকটা আন্দাজেই ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এখনো আমি অনেকের সাথে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে পারছি না। কারণ আমি মেসেঞ্জারে ঢুকতেই পারছি না। আর তাদের ফোন নম্বরও নেই আমার কাছে।’
ফেসবুকে সোয়াঙ্কি গার্লস নামে একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করেন নওরীন হাবিব। তিনি বলেন, ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার ব্যবসা পুরো বন্ধ হয়ে আছে। এই কয়েক দিনে নতুন কোনো অর্ডার পাননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে কোনো লাইক, কমেন্ট কিচ্ছু নাই। পুরো শাটডাউন হয়ে আছে। সবাই তো জানেও না যে ভিপিএন কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।’