খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আদৌ বিদেশ নিয়ে যাবার প্রয়োজন আছে কিনা সেটিই এখন বড় প্রশ্ন ? বিএনপি কেন যে তাঁকে বিদেশ নিয়ে যেতে চায় সেটি বোধগম্য নয়। কারণ দেশেই তো বেগম খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন।
দেশের দু’বারের প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়া আমার কাছে একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক এটিই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, এটিই আমাদের কাম্য। বেগম খালেদা জিয়া যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পান সেটির জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা এখন বাংলাদেশে পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাকে বিদেশ নিয়ে যাবার জন্য এখন বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। যে সমস্ত দেশে নিয়ে যাবার কথা বলা হচ্ছে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে, সেখানে করোনা মহামারিতে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
শনিবার (৮ মে) দুপুরে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ও সিটি ইউনিট যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনিযুক্ত ট্রেজারার এমএ ছালাম ও করোনাকালীন ভূমিকা রাখা কর্মীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজমের সভাপতিত্বে ও যুব রেড ক্রিসেন্টের যুব প্রধান গাজী ইফতেখার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, সংবর্ধিত অতিথি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনিযুক্ত ট্রেজারার এমএ ছালাম, জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি মো. আসলাম খাঁন, সিটি ইউনিটের সেক্রেটারি আবদুল জব্বার প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ইদানিং দেখতে পাচ্ছি বিএনপি সমগ্র দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয়, এনিয়ে তাদের কোন চিন্তা নাই। তাদের সমস্ত চিন্তা এখন কেন্দ্রীভূত বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে। বেগম খালেদা জিয়ার তাপমাত্রা আছে কি নাই, এটি কত ডিগ্রি আছে, হাঁটুর ব্যথা আছে কি নাই এটার মধ্যেই বিএনপির রাজনীতিটা এখন সীমাবদ্ধ।
বিএনপিকে অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের চিন্তাটা শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের মধ্যে নিমগ্ন না রেখে জনগণের পাশে দাঁড়ান। যেভাবে মানুষের দোড়গোড়ায় আওয়ামী লীগ খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিচ্ছে, সেভাবে আপনারাও মাঠে এসে জনগণের কাছে বিতরণ করুন। তারপর আমাদের ভুলত্রুটি যদি থাকে সেটার সমালোচনা করার অধিকার আপনাদের তৈরি হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে তিন প্রকারে বিশেষজ্ঞ আছে। একটা হচ্ছে : সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ, আরেকটা হচ্ছে বিশেষ কারণে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, আর কিছু বিশেষজ্ঞ আছে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। যেমন, উনি পড়েছেন রাজনীতি আবার তিনি অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ, উনি পড়েছেন আইন কিন্তু উনি আবার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। এভাবে কিছু বিশেষজ্ঞ আছে যারা সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, সব বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ, আবার বিশেষ কারণে যারা অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ তারা করোনা মহামারির শুরুতে মত প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে থাকবে এবং লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্বের কারণে গত ১৪ মাসে একজন মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপিসহ তার মিত্র যারা সমালোচনা করে এবং যারা রাত বারোটার পর টেলিভিশনের পর্দা গরম করে তাদের দূরবীন দিয়েও দেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কেউ কি কোন ত্রাণ বিতরণের মধ্যে আছে, সেখানে নাই। তারা শুধু সমালোচনার মধ্যে আছে। আমরা কি কাজ করছি সেটির সমালোচনা করা ছাড়া তাদের কোন কাজ নাই।
তিনি বলেন, আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে করোনার জন্য যে ১২ হাজারেরও বেশি বেড রয়েছে তার ৭০ ভাগ বেড খালি আছে, অনেক আইসিইউ বেডও খালি আছে। করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছে। কিন্তু সমালোচকদের সমালোচনা থেমে নেই।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মানুষ প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, অন্যকে নিয়ে ভাবে না। মানুষ ক্রমাগত যন্ত্রের ব্যবহারের সাথে সাথে মানুষগুলোও যেন যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রের যেমন অনুভূতি নেই, মানুষও অনুভূতিহীন প্রাণী ঝড়পদার্থে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রেড ক্রিসেন্টের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্ত-মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা যেভাবে কাজ করছেন সেটি সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই দেশ দুর্যোগ-দুর্বিপাকের দেশ। সমস্ত দুর্যোগ-দুর্বিপাকে রেড ক্রিসেন্টর অকুতোভয় সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়েছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর গত পঞ্চাশ বছরের পথচলায় কোটি কোটি মানুষ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক উপকৃত হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে ত্রাণ বিতরণসহ টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা যেভাবে আর্ত-মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন সেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।