আজ ৫ই জুন ২০২১বিশ্ব পরিবেশ দিবস
মোঃ জাকির হোসেন তামিম
১৯৭৪ সালে এই দিবসটি প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। সামুদ্রিক -ভূমি দূষন, মানব জনসংখ্যার ব্যাপ্তি, বৈশ্বিক উষ্ণতা, বন্যপ্রাণ ও প্রানীর মতো পরিবেশগত বিষয়ে সচেতনতার উদ্দেশ্য দিবসটি প্রতিবছর ৫ই জুন পালন করা হয়।
পরিবেশ দিবসের সূচনাকাল ধরা হলে
১৯৬৮ সালের ২০মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি পত্র প্রেরণ করে সুইডেন সরকার। মূল বিষয়বস্তু প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ এবং সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারটি সাধারণ অধিবেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
পরবর্তী বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিষদ আলোচনা ও সমাধানের উপায় বের করতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫-১৬জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন করা হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতির খেতাপ পায়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি বিশ্বজনীন প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজনকরে, সেখানে প্রতিবছর ১৪৩টিরও বেশি দেশ অংশ নিয়ে থাকে। প্রতিবছর পরিবেশের সুরক্ষায় একটি নতুন থিম এবং ফোরাম করা হয়ে থাকে।
পরিবেশদূষণের কারণের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগর-আবাসস্হল তৈরি, ব্যাপকহারে গাছ কাটা ও বনভূমি ধংস , প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ অপব্যবহার, অনিরাপদ শিল্পায়ন, অতিরিক্ত মাত্রায় সার ও বালাইনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, শিল্প-কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইটের ভাটা, ওজোন স্তরের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল যার ফলে ওজন স্তরের ক্ষতি সহ অ্যাসিড বৃষ্টি, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, দারিদ্র্যতা সৃষ্ট কর্ম, প্রসাধনসামগ্রী তৈরিতে পানযোগ্য পানির ব্যবহার,অবাধ প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি।
প্রকৃতিকে জয় করেছি আমরা ঠিকই।আধুনিক শিল্পায়ন, কৃষি উন্নয়ন এমনি মহাকাশও জয় করে
আরো দেখুন:
আজ আমরা এক ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি। এ সংকট আজ বিশ্বজুড়ে পুরো বিশ্ববাসীর । বিশ্বের পরিবেশ এখন বিভিন্ন ভাবে দূষিত। দূষণের প্রভাব ভয়াবহ দূর্যোগের দিকে পৃথিবীকে নিয়ে যাচ্ছে।
ভয়াবহ পরিবেশদূষণের কবলে কোটি কোটি মানুষ প্রান সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। হতে যাচ্ছেএক মহাধ্বংস – প্রলয়- কেয়ামত! জলে বিষ। বাতাসে ভাইরাস। মাটির ফাটল – রহস্যময় হোল- ঘন ঘন ভূমিকম্প। গত ৫০ বছরে ৭৫ টির বেশি প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কয়েক শ প্রজাতির গাছপালা হারিয়ে গেছে।
শিল্পবিপ্লবের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে কিন্তু তার বিপরীতে বাতাসে ফি বছর ২২/২৩ কোটি টন কার্বন মনোক্সাইড জমা হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাই–অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড,কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের হার ক্রমান্নয়ে বাড়েই চলেছে। বৃষ্টির জলে অ্যাসিডের পরিমাণ ভয়ানক ভাবে বাড়ছে। এই বৃষ্টি বর্ষণ মহামারির সৃষ্টি করছে। খাদ্যশস্যকে বিষাক্ত করছে। ধ্বংস হচ্ছে বন- অরণ্য। সারা বিশ্বে এখন ৮০ শতাংশ হলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য। তার মধ্যে মিনিটেই ২১ হেক্টর কৃষিযোগ্য জমি বন্ধ্যা হচ্ছে। ৭৫ লাখ হেক্টর কৃষিজমি মরুভূমিতে পরিনত হয়ে যাচ্ছে।
বাতাসে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন কমছে যাচ্ছে, বাড়ছে বিষাক্ততা। বিজ্ঞানের অপব্যবহার, গোপন ল্যাব টেস্ট, ভাইরাসের সৃষ্টি, ভূপ্রকৃতির ও মানব দেহে অত্যাচার বাড়াচ্ছে। হাইব্রীড শস্যের জন্য নানা ধরনের কীটনাশক ওষুধ তৈরি ও ক্যামিকাল প্রয়োগ হচ্ছে। এসব দ্রব্যের প্রবেশ ঘটছে মানব দেহে। তাই তো নানা জটিল ও কঠিন রোগের শিকার হচ্ছি প্রতিনিয়ত ।
পরিবেশদূষণের ফলে বিশ্বে ৭৫ শতাংশ নিত্যনতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে পানিতে পরিণত হচ্ছে। পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর সংকোচনের মাত্রা বাড়ছে। যার কারনে সূর্যের মারাত্মক অতিবেগুনি রশ্মি প্রাণিজগৎকে সরাসরি স্পর্শের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এই দূষণের অত্যাচারে উদ্ভিদ ও জীবজগৎ আজ মৃত্যুর দিকে ধাবিত। সমুদ্রে-নদীতে-জলাশয়ে মাছের সংখ্যা নেই বললেই চলে। সমুদ্রগামী জাহাজ – ট্রলারের বর্জ্য মাছের শরীরে নানা রোগের রোগের সৃষ্টি করছে।নতুন হচ্ছে নিত্য নতুন ব্যাকটেরিয়া,ফ্যাংগাস,ভাইরাস”
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশগত ঝুঁকি এবং দূষনের কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু ঘটে, এর ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশদূষণজনিত রোগব্যাধির কারণে। অথচ পুরো বিশ্বে এ জাতীয় মৃত্যুর হার মাত্র ১৬%।
বিশ্বব্যাংকের ওই পরিসংখ্যানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।
তাই নিজেদের অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেবার এখনই সময়। কাল নয়, আজ থেকে বরং আজ থেকে নয় এখনই।
আসুন পরিবেশ বাঁচাই,পৃথিবী বাঁচাই,জীবন বাঁচাই।