১. গ্রামে আমার মূল
গ্রাম দেখি এই কলমিলতা
নানান রঙের ফুল,
গ্রাম দেখি এই বয়ে যাওয়া
ফেনী নদীর কূল।
গ্রাম দেখি এই বাবুই পাখি
মাতিয়ে রাখে বন,
গ্রাম দেখি এই নানান পাখির
নিবিড় আলিঙ্গন।
গ্রাম দেখি এই বাংলা পুকুর
সচ্ছ কেমন জল,
গ্রাম দেখি এই ভালুকিয়ার
দীঘি টলোমল।
গ্রাম দেখি এই ছবির মতো
গ্রামে ভালো মন,
গ্রাম দেখি এই মন ভোলানো
সবুজ বনায়ন।
গ্রাম দেখি এই বকুল ছায়া
কেয়া-কদম ফুল,
গ্রাম দেখি এই মায়ের মতো
গ্রামে আমার মূল।
২. চড়ুই পাখির শহর
চড়ুই পাখির ডাকে আমার
ভাঙলো ভোরের ঘুম,
শীত কুয়াশার ফাঁকে এলো
মিষ্টি রোদের চুম।
চড়ুই পাখি বেলকনিতে
এসে আমায় কয়,
সকাল হলো এই শহরে
হিমেল হাওয়া বয়।
ব্যস্ত শহর ব্যস্ত সবাই
কে রাখে কার খোঁজ,
আমিই চড়ুই উড়ে বেড়াই
দালান ঘরে রোজ।
শহর জুড়ে চার দেয়ালে
কোথায় বাঁধি ঘর,
ভালোবেসে কেউ ডাকে না
ভাবে সবাই পর।
বেলকনিতে ফুলের টবে
যদি খাবার পাই,
ভাবি, মানুষ ভালোবাসে
উড়ে উড়ে যাই।
৩. মায়ের আদর
মা যে আঁচল আগলে ধরে
রাখে মায়ের বুকে,
মায়ের আদর স্নেহে আমি
থাকি পরম সুখে।
মা যে আমার এতোই আপন
থাকি মায়ের পিছু,
মা ছাড়া আর ভুবন জুড়ে
নেই তো আপন কিছু।
তৃপ্তি এমন পাই না কোথাও
মায়ের খাওয়ার মতন,
কেউ করে না হাত বুলিয়ে
মায়ের মতো যতন।
মায়ের ডাকে মুখ ফোটে তাই
মা’কে প্রথম চাওয়া,
মা তো আমার প্রভুর রহম
বেহেস্ত থেকে পাওয়া।
মা ছাড়া তো কাটে না আর
আমার কোন বেলা,
ঘরের ভেতর মা যেন এক
আনন্দেরই মেলা।
৪. নবান্নের দিন
আজ কৃষকের মুখে হাসি
নবান্নেরই ধানে,
ছেলেমেয়ে ছুটছে মাঠে
আনন্দেরই বানে।
হেমন্তে এই সাজ ধরেছে
পাকা ধানের মাঠে,
হাসিমুখে জল-জমিতে
সোনালি ধান কাটে।
খুশির টানে চলছে গানে
ধান মাড়াইয়ের মেলা,
কৃষাণ-চাষি গ্রামে গ্রামে
নামায় সন্ধ্যা বেলা।
খুশির জোয়ার পাড়া জুড়ে
চিতই পিঠার ঘ্রাণে,
মাঠ ছেড়ে সব ফিরছে ঘরে
শীতের ছোঁয়া প্রাণে।
নবান্নে এই ভরলে গোলা
মুখখানা তার হাসির,
দিন বদলের স্বপ্ন দেখে
দিন কেটে যায় চাষির।
৫. যাই হারিয়ে
মাঠের টানে সোনার ধানে
চাষার ধ্যানে,
যাই হারিয়ে শীতের গানে।
আমন ধানে হাসি আনে
খুশির বানে,
যাই হারিয়ে জমির টানে।
খেজুর গাছে পাখি নাচে
হাঁড়ির কাছে,
যাই হারিয়ে নতুন ধাঁচে।
ঘরের কাজে পিঠার সাজে
শীত আমেজে,
যাই হারিয়ে পিঠার মাঝে।
শীতের ভোরে শিউলি ঝরে
মাঠের পরে,
যাই হারিয়ে তেপান্তরে।
লেখক- মিজান ফারাবী, কবি ও প্রাবন্ধিক।