যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার দায়ে ডেরেক শভিনকে ২২ বছরের কারাদণ্ড

0 248


আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে ২০২০ সালের মে মাসে মিনেয়াপোলিস শহরে হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ সাবেক একজন পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনকে ২২ বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিচারক রয়েছেন, বিশ্বাস ও দায়িত্বশীলতার এক পদের অপব্যবহার এবং বিশেষ করে মি. ফ্লয়েডের ওপর যে নিষ্ঠুরতা তিনি দেখিয়েছেন, সেসব কারণে তাকে এই দণ্ড দেয়া হয়েছে।

গ্রেফতারের সময় ৪৮ বছর বয়সী মি.ফ্লয়েডের গলার ওপর মিনিটের বেশি সময় হাঁটু গেড়ে বসে থাকার কারণে তার মৃত্যু হয়।

তার এই হত্যাকাণ্ডের ফলে সারা বিশ্বে বর্ণবাদ এবং পুলিশি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।

৪৫ বছর বয়সী শভিন গত মাসে সেকেন্ড ডিগ্রি হত্যাকাণ্ড এবং আরও কয়েকটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। বিচার চলার সময় তার আইনজীবী দাবি করেছিলেন, এই হত্যার ঘটনাটি আসলে ‘সরল বিশ্বাসে করা একটি ভুল’।

সাজার রায়ে ডেরেক শভিনকে ‘প্রিডেটরি অফেন্ডার হিসাবে তালিকাভুক্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নজরদারি করে থাকে।

সেই সঙ্গে শভিনকে আজীবনের জন্য অস্ত্রের মালিক হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরও তিনজন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে জর্জ ফ্লয়েডের সাধারণ নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মি. ফ্লয়েডের পরিবার এবং তাদের সমর্থকরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।

“এই ঐতিহাসিক সাজার মাধ্যমে পরিণতি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ফ্লয়েড পরিবার এবং আমাদের জাতিকে আরও (ওই ঘটনার) নিরাময়ের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল,” আইনজীবী বেন ক্রাম্প একটি টুইট বার্তায় বলেছেন।

মি. ফ্লয়েডের বোন ব্রিজেট ফ্লয়েড বলেছেন, এই কারাদণ্ড ”পুলিশের নিষ্ঠুরতার অভিযোগ যে শেষ পর্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়ে থাকে,” সেটাই প্রমাণ করলো। তবে এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘সাজাটি সঠিক বলেই মনে হচ্ছে,” যদিও স্বীকার করেছেন যে, তিনি বিস্তারিত সব কিছু জানেন না।
শুনানিতে যা বলা হয়েছে:
আদালতে যখন সাজার শুনানি চলছিল, তখন মি. ফ্লয়েডের ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড সর্বোচ্চ সাজা, ৪০ বছরের কারাদণ্ডের দাবি করেছিলেন।

“কেন? তখন আপনি কি ভাবছিলেন? আপনার পা দিয়ে যখন আমার ভাইয়ের গলা চেপে ধরেছিলেন, তখন আপনার মাথার মধ্যে কি কাজ করছিল?” তিনি বলেন।

মি. ফ্লয়েডের সাত বছরের গায়ানাকে একটি ভিডিও রেকর্ডিয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, যেখান তাকে বলতে শোনা যায় যে, সে তার বাবার অভাব বোধ করছে এবং তাকে ভালোবাসে।

“সে কোথায় আমি সবসময়ে জানতে চাই,” সে বলে, “আমার বাবা সমসময়ে আমার দাঁত মাজতে সাহায্য করতো।”

বিচারক বলেছেন, এই মামলাটি পুরো সম্প্রদায় এবং দেশের জন্য কষ্টদায়ক, কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্টের মি. ফ্লয়েডের পরিবারের জন্য।

“আবেগ বা সহানুভূতির ওপর নির্ভর করে এই সাজা দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি এটাও বলতে চাই, যে গভীর ও অবর্ণনীয় বেদনা সব পরিবারগুলো অনুভব করছে, বিশেষ করে মি. ফ্লয়েডের পরিবার, আমি সেটা অনুভব করতে পারছি।” বলেছেন বিচারক পিটার কেহিল।

আদালতে ডেরেক শভিন বলেছেন যে, ফ্লয়েড পরিবারের প্রতি তিনি তার সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “ওই ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যতে হয়তো অন্য কিছু তথ্য জানা যাবে,” এবং তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, “সবকিছু মিলিয়ে হয়তো আপনাদের মনে শান্তি আসবে।”

কিন্তু তিনি ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।

আদালতে ডেরেক শভিনের মা বলেছেন, “তিনি একজন ভালো ব্যক্তি।”

“তোমার নির্দোষিতার ওপর আমার সবসময়েই বিশ্বাস আছে এবং আমি সেখান থেকে কখনোই টলবো না।” বলেছেন তার মা ক্যারোলিন পাউলেন্টি।

মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল কেইথ এলিসন বলেছেন, ডেরেক শভিনের এই সাজা হচ্ছে, ভয়াবহভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তার ‘সবচেয়ে দীর্ঘ সাজার’ অন্যতম।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave A Reply

Your email address will not be published.