ভ্যাকসিন সংগ্রহে যত টাকাই লাগুক সমস্যা নাই

0 237

নিজস্ব প্রতিবেদক :

আগামী জুলাই মাস থেকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা আসতে শুরু করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যত টাকাই প্রয়োজন হোক না কেন সরকার প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সকল নাগরিককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবো বলে ঘোষণা করেছি। এজন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য যত টাকাই লাগুক না কেন আমরা সেই টাকা দেবো।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ভ্যাকসিন সঙ্কট কেটে যাওয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ভারত ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় আমরা সাময়িকভাবে সমস্যায় পড়ে গেছি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বর্তমানে আমাদের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সব কোম্পানির সাথে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আশা করছি, জুলাই মাস থেকে আরও ভ্যাকসিন আসবে। ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। গত বছর আমরা করোনার প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। সেই অভিজ্ঞতায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মহামারি মোকাবিলা করে জনস্বাস্থ্য ও জনজীবন সুরক্ষা করতে আমরা সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।’

করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থার কথা জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ এখনো বিদ্যমান থাকায় যেকোনো জরুরি চাহিদা মোকাবিলায় আমরা এ বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। দ্রুততম সময় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যখাতে অভিঘাত থেকে মুক্তি পেতে সমন্বিত বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। বাজেটে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছিল পৃথিবীর সব জায়গায়। আমরা যোগাযোগ করি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয়ার আগেই আমরা টাকা পাঠিয়ে ভ্যাকসিন বুক করেছি। দুর্ভাগ্যজনক যে ভারতে হঠাৎ করোনা এত ব্যাপকহারে বেড়ে গেল যে তারা ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় আমরা সাময়িকভাবে সমস্যায় পড়ে গেছি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বর্তমানে আমাদের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কেনার জন্য বাজেটে আমরা ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি। বিভিন্ন উৎস হতে ইতোমধ্যে এক কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেছি। যারা বিদেশ যাচ্ছে তাদের আগে ভ্যাকসিন দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যাতে বিদেশে গিয়ে তাদের কোয়ারেন্টাইন করতে না হয়। কর্মস্থলে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।

সংসদ নেতা বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কোন ভ্যাকসিন কোন বয়স পর্যন্ত দেয়া যাবে তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা বিবেচনায় রেখে আমরা স্কুল থেকে শুরু করে সকলে যাতে ভ্যাকসিন পায়, এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে সেই ব্যবস্থা নেবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে সারাবিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত এমন সময় আমরা বাজেট দিয়েছি। একদিকে সারাবিশ্ব করোনায় আক্রান্ত অপরদিকে আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। একই সময় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। এই তিনটি গৌরবময় অধ্যায়ের মাঝে করোনায় জর্জরিত।

তিনি বলেন, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সত্ত্বেও সরকারের পদক্ষেপে আমাদের অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গভাবে পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। আমাদের সরকার সঙ্কটকালে দেশের মানুষের পাশে আছে। মানুষের পাশে থাকবে। জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে জীবন-জীবিকার সুরক্ষা দেয়া এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন হলে দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কররো। মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াবো।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি থেকে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দেশব্যাপী ও অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন কার্যকরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদানসহ জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ করোনা মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ল্যাব স্থাপনসহ করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করায় ভাইরাসের বিস্তার রোধে অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশ সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ২০ হাজার ৫০০ চিকিৎসক ও নার্সকে ১০৪ কোটি টাকা বিশেষ সম্মানি দেয়া হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.