মেয়র তাপসকে ‘দুষছেন’ সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিজের ও পরিবারের আটটি ব্যাংক হিসাব স্থগিতের (ফ্রিজ) যে আদেশ আদালত দিয়েছেন, তার জন্য বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে ‘দুষছেন’ সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তার দাবি— তাপসের প্ররোচনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এমন কাজ করেছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাপসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন সাঈদ খোকন।
তিনি বলেন, নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে সীমাহীন বিদ্বেষ ও হয়রানিমূলক আচরণ করছেন তাপস। দুদকের এই কর্মকাণ্ড তাপসের প্ররোচনায় সংঘটিত হয়েছে। আমি আইনি মোকাবিলা করব এবং সাথে সাথে ঢাকাবাসীকে নিয়ে প্রয়োজনে আরেকবার সংগ্রাম করব।
মেয়র তাপসকে উদ্দেশ্য করে সাঈদ খোকন বলেন, তাপস কতটুকু ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন এই শহরের মানুষ জানেন। কত পার্সেন্ট ভোট পেয়েছেন তাও মানুষ জানে। যাই হোক ক্ষমতায় আছেন, মানুষের কাজ করেন। ব্যর্থতা ঢাকার জন্য আরেকজনের মাথায় কালিমা লেপন করে দেবেন ঢাকাবাসী এটা মেনে নেবে না।
সাবেক এই মেয়র আরও বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আগে দুর্নীতি দমন কমিশন আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সদস্যকে কোনরূপ নোটিশ প্রদান না করে, কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি আদালতের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এমন কর্মকাণ্ডে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের মৌলিক এবং সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের ওই আটটি ব্যাংক হিসাবে সাত কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৩ টাকা রয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমার এবং আমার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকলে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পাওনা আদায় বন্ধ হয়ে যাবে। আমার সংসার পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়বে। সবকিছু আমার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ করব, আপনারা আদালতের মাধ্যমে আমার ও আমার পরিবারের অ্যাকাউন্ট সচল করে দিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পরিচালনার সুযোগ করে দেবেন।’
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, তদন্ত করতে আমার এবং আমার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতেই পারে। কিন্তু একজন নাগরিক হিসেবে আমি কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখতে চাই। আপনারা জানেন আমার পরিবার এই শহর ততই দেশের প্রায় এক শতাব্দী যাবৎ মানুষের সেবা করে আসছি। আপনারা জানেন ঢাকার শেষ সরদার আলহাজ্ব মাজেদ সরদার তার মেয়ে আমার মা ফাতেমা হানিফ। তার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার মাধ্যমে আমার বৃদ্ধ মাকে হয়রানিমূলক আচরণের শিকার হতে হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে একজন সম্মানিত মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন করা কোনোদিন কাম্য হতে পারে না।
সাবেক এ মেয়র বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র তাপস নগর পরিচালনায় তার সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতে প্রায়ই আমার প্রতি বিভিন্ন হয়রানি ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করে আসছেন।
ব্যবসা-বাণিজ্য করলে এই শহরের অন্যতম ধনী হতে পারতেন দাবি করে সাঈদ খোকন বলেন, ১৯৮৭ সালে তৎকালীন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদক হিসেবে রাজনীতি শুরু। এ শহরের মানুষের জন্য দীর্ঘ ৩৩ বছরের রাজনীতি করেছি। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় রাজপথে ছিলাম। মামলা খেয়েছি। কিন্তু রাজপথ ছাড়ি নাই। তবে কি আজকের এই অবস্থার দেখার জন্য? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনারা বিবেচনা করবেন।
দুদককে অনুরোধ করে তিনি বলেন, আপনারা আদালতের মাধ্যমে আমার জব্দ করা অ্যাকাউন্ট সচল করে দিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পরিচালনার সুযোগ করে দেবেন। এটা আমার ও আমার পরিবার মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার।