কুমিল্লায় বাসের চেকারকে পিটিয়ে হত্যা

0 315

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় চলন্ত বাস থেকে নামিয়ে এক চেকারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম বোরহান উদ্দিন ভূঁইয়া।

মঙ্গলবার রাতে সিলেট-কুমিল্লা মহাসড়কের বুড়িচংয়ের ময়নামতি ইউনিয়ন শরীফপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে পরিবহণ শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করছে বলে জানা গেছে।

নিহত বোরহান দেবিদ্বার উপজেলার ফুলতুলি গ্রামের বাসিন্দা।

এদিকে এ ঘটনায় অপরাধীকে গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে আগামী শনিবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা পরিবহণ বাস মালিক শ্রমিকরা।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ঢাকার পরিবহণ মালিক জড়িত বলে দাবি করেছেন নিহতের স্ত্রী পারভীন আক্তার।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে ময়নামতি শরীফপুর পয়েন্ট কুমিল্লা জেলা শহরের কুমিল্লা সিলেট মহাসড়কে তিশা বাস থেকে নামিয়ে কয়েকজন শ্রমিক ও সন্ত্রাসীরা চেকার বোরহানকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়।

খবর পেয়ে তার স্ত্রী পারভীন স্বামীকে (রায়হান) রাস্তার পাশের থেকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল  হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহত বোরহানের স্ত্রী পারভীন আক্তার কয়েকজনকে আসামি করে বুধবার বুড়িচং থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

নিহত বোরহানের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গাড়ির ডিউটি করছেন। ঢাকার একজন গাড়ির মালিকের সঙ্গে কিছু দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল আমার স্বামীর। এর জের ধরে তাকে কুমিল্লা সিলেট মহাসড়কের ময়নামতি ইউনিয়ন শরিফ পয়েন্টের বাস থেকে জোর করে নামায় সন্ত্রাসীরা। এর পর লাথি ঘুষি ও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মারধর করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমার স্বামী মারা যান। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।

তিনি আরও বলেন, আমি আসামিকে চিহ্নিত করি, তারা মাদকাসক্ত ছিল তাদের বাড়ি বুড়িচং থানা এলাকায়।

বুড়িচং থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করব ইনশাআল্লাহ। অপরাধী যেই হোক ছাড় দেওয়া হবে না। মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় আইনজীবী মো. তৌহিদ বলেন, চিহ্নিত অপরাধীরা পরিবহন শ্রমিক পরিচয়ে নিরাপদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও স্ট্যান্ডে অবস্থান করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি। কারণ শুধু এই হত্যাকাণ্ড নয়, কুমিল্লা রোডে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিভ্রান্ত করে, অচেনা পথে নিয়ে মালামাল লুটের অসংখ্য ঘটনার সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিক নামধারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। অসংখ্য ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। হত্যা, লাশগুমেও পরিবহণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলায়।

এর  আগেও মহাসড়কের পাশে লাশ পাওয়া গেছে কুমিল্লা মুরাদনগরের এক আওয়ামী লীগ নেতার। এতে মামলাও হয়েছে।

তিনি জানান, অপরাধসংশ্লিষ্ট এমন কতিপয় পরিবহণ চালকের কারণে এখন পুরো পরিবহণ শ্রমিক গোষ্ঠীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাদের ওপর আস্থা হারাচ্ছে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। অপরাধ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনেকটা জিম্মি খোদ পরিবহণ শ্রমিকরাই। এমন অবস্থা থেকে নিরীহ প্রকৃত পরিবহণ শ্রমিকদের রক্ষা করতে হবে। নগরবাসীর হাঁটাচলার ফুটপাত-রাস্তা নিরাপদ করতে প্রশাসনসহ সব রাজনৈতিক ও শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলার রাজনীতিবিদ ওমর ফারুক বলেন, নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা চরম নিন্দনীয় ও জঘন্য। বারবার কেন এমন বেপরোয়া, হিংস্র ও মানবতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ড ঘটছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আইনের শাসনের অভাব অরাজকতাকে উসকে দিচ্ছে কিনা এখনই খতিয়ে দেখে অপরাধের মুখে লাগাম দেওয়া জরুরি।

কুমিল্লা জেলা পরিবহণের সাবেক সম্পাদক আলম বলেন, কুমিল্লা হলো শান্তির নগরী, দেশ-বিদেশে এর সুনাম রয়েছে। কিন্তু একের পর এক অরাজকতা চরম উদ্বিগ্ন করে তুলছে নগরবাসীকে। বেপরোয়া হয়ে ওঠা অপরাধীদের আড়াল থেকে হয়তো কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তি আশকারা দিচ্ছে। নতুবা লাখো নগরবাসীর জীবন গুটিকয়েক অপরাধী অশান্ত করে তুলতে পারত না। এখনই তাদের প্রতিরোধ করা না গেলে; এ জন্য চরম মাসুল দিতে হবে।

বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আখলাক হায়দার বলেন, চেকার কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা নিন্দনীয়। এসব বিষয়ে আমরা চুল পরিমাণ ছাড় দেব না। সব শ্রেণিপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয়জনিত সমস্যার সমাধান বড় কঠিন। শিগগিরই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.