বগুড়ায় দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত দলের ০৫ সদস্য গ্রেফতার

0 195

বগুড়ার গাবতলীতে নৈশ প্রহরীদের হাত পা বেঁধে তিন মার্কেটে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত দলের দলনেতা মোঃ দেলোয়ার হোসেনসহ দলের ০৫ সদস্যকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিদেশী পিস্তল, দেশীয় ধারালো অস্ত্র এবং লুন্ঠিত মালামালসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

 

গত ০৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখ দিবাগত রাতে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দূর্গাহাটা নামক বাজারে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ট্রাকযোগে এসে তিনটি মার্কেট; যথাক্রমে মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে অস্ত্রের মুখে নৈশ প্রহরীদের হাত পা ও মুখ বেঁধে মার্কেট সমূহের তালা কেটে ৯টি দোকানে দুধর্ষ ডাকাতি করে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়, মোবাইলসহ প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে। বর্ণিত ঘটনায় দোকানের মালিকদের পক্ষ হতে ঘটনার পরদিন গাবতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করা হয়; যার মামলা নং-০৬/২০৫, তারিখ ০৭ নভেম্বর ২০২১। দূধর্ষ এবং সুপরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনাটি এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং জনগণ এর মধ্যে ব্যাপক ভীতির/ত্রাসের সঞ্চার করে। পরবর্তীতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ এবং নৈশ প্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক তদন্তে এই দলটি দীর্ঘদিন যাবত ডাকাতি, চুরিসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে জড়িত এবং সংঘবদ্ধ এই দলটি বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা সমূহে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে থাকে বলে তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে গ্রেফতারে র‌্যাব ছায়া তদন্ত এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১২ ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত দলের সরদার (১) মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৩৫), পিতাঃ সামছুল উদ্দিন, টাঙ্গাইল ও সহযোগী যথাক্রমে (২) মোঃ আব্দুল হালিম মিয়া জুয়েল (২৮), পিতা-ইসমাইল হোসেন, টাঙ্গাইল, (৩) আলী হোসেন (৫৬), পিতাঃ মৃত বিল্লাল হোসেন, ময়মনসিংহ, (৪) মোঃ সুমন মুন্সি (২০), পিতাঃ কানু মুন্সি, নাটোর এবং (৫) মোঃ হুমায়ুুন কবির (৩৫), পিতাঃ মৃত আব্দুল গনি’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ০১টি ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, ০৪ রাউন্ড গুলি, ০১টি বোল্ট কাটার, ০২টি  রাম দা, ০৩টি শাবল, ০২টি ছুরি, ০১টি কাঁচি, ১০টি লাঠি, ০১টি হাতুড়ী ও ০১টি টর্চ লাইট ও ০১টি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের নিকট হতে দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুন্ঠিত মালামাল সমূহের মধ্য হতে  স্বর্ণের ৩টি রুলির বালা, ৩টি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, ০২টি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের ০৩টি গলার হার, ০৪ টি গলার চেইন, ০৩ জোড়া কানের দুল, ০১টি বড় আংটি, ০১টি ছোট আংটি ও ০৩ জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের নিকট হতে কাপড়ের হতে লুন্ঠনকৃত বিপুল পরিমান বস্ত্র সামগ্রী উদ্ধার করা হয় (৬২ পিস থ্রী-পিস, ১৪১ পিস শাড়ী, ৮৫ পিস গেঞ্জি, ০৯ সেট প্যান্ট পিস, ০৫টি ধূতি কাপড়, ১০টি ট্রাউজার ও ১০টি ব্যাগ)। বর্ণিত ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, বিভিন্ন  পেশার আড়ালে ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গ্রেফতারকৃতদের স্থায়ী নিবাস বিভিন্ন জেলায় হলেও তারা সাভার এবং তার আশেপাশের এলাকায় বসবাস করে এবং এই সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা ১২/১৫ জন। সংঘবদ্ধ দলটি ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে থাকে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং তালা ও গ্রীল কাটার বিভিন্ন যন্ত্র তারা ট্রাকের সামনের কেবিনে চালকের আসনের নিচে লুকায়িতভাবে পরিবহন করে থাকে। তারা বিভিন্ন বাসা বাড়ি এবং মার্কেটের দোকান, শো-রুম, জুয়েলারী শপে ডাকাতি করে থাকে। ইতোপূর্বে তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর এবং সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে বলে জানায়।

গত ০৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখ বগুড়ার গাবতলীতে ডাকাতির ঘটনায় বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, ডাকাত দলের সরদার দেলোয়ারের নির্দেশে তার দলের ০২ জন সহযোগী গ্রেফতারকৃত হালিম ও সুমন গত ২৬ এবং ২৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখে দুর্গাহাটা বাজারে যায়। এসময় তারা মূল্যবান সামগ্রীসহ দোকান, রাত্রিকালে নৈশ প্রহরীর সংখ্যা ও অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে দেলোয়ার এবং কবির ডাকাতির বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। দেলোয়ার ও কবির ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাত দলের ৯ জন ঘটনার আগের দিন বিকেলে সাভারের নবীনগরে একত্রিত হয়ে বগুড়ার গাবতলীর উদ্দেশে ট্রাকে করে যাত্রা করে। যাত্রাপথে আরো কয়েকজন সিরাজগঞ্জ এবং বগুড়া হতে তাদের সাথে যুক্ত হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক মোট ১২ জনের এই ডাকাত দলটি ০২টি ভাগে বিভক্ত হয়ে গাবতলীর দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির কাজ সম্পন্ন করে। ডাকাতদের ০১টি দল বাজারে পাহারারত তিনজন নৈশ প্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এসময় অপর দলটি পূর্ব হতে রেকি করা তিনটি মার্কেটের নয়টি দোকান এর তালা ভেঙে দোকানের ভিতর রক্ষিত মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লুট করে।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ডাকাতি করে সাভার এর নবীনগরে প্রত্যাবর্তনকালে লুণ্ঠনকৃত মালামাল এর মধ্যে গার্মেন্টসের কাপড়ের আইটেম সমূহ একটি মার্কেটে   বিক্রি করে। ডাকাতিকালে প্রাপ্ত টিভি, মোবাইল এবং অর্থ তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। এছাড়াও বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার তারা ঘটনার পরদিন অন্য ০২ টি মার্কেটের জুয়েলার্সের দোকানে বিক্রি করে বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার হোসেন এই ডাকাত দলের সরদার। জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার স্বীকার করে যে গত ৬/৭ বছর যাবত সে ডাকাতি করছে। ডাকাতির পূর্বে সে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে। ইতোপূর্বেও তারা মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর, ঢাকা এবং সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায়  দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে। তার নামে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় ০৪ টি ডাকাতিসহ চুরি এবং মাদকের মামলা রয়েছে।

ডাকাত দল এবং লুণ্ঠনকৃত মালামাল পরিবহণে গ্রেফতারকৃত মোঃ হুমায়ুন কবির একটি ট্রাক সরবরাহ করে এবং ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। জিজ্ঞাসাবাদে কবির স্বীকার করে যে, ডাকাতের কাজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই সে এই ট্রাকটি চুরি করে এবং পূর্বেও এই ট্রাক দিয়ে তারা ডাকাতি করেছে। তার নামে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানায় ডাকাতির ১ টি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আলী হোসেন, আব্দুল হালিম এবং মোঃ সুমন মুন্সি দূর্গাহাটা বাজারে সংগঠিত ডাকাতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ডাকাতিকালে বিভিন্ন দোকানের তালা ভাঙ্গা, মালামাল বস্তায় লোড এবং সর্বশেষ ট্রাক লোডের কাজে সহায়তা করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, ডাকাতদলের সরদার দেলোয়ারের নেতৃত্বে পূর্বেও তারা একাধিক স্থানে ডাকাতি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি এবং চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.