ঈমান ও আমলের নিয়ামত
ঈমান ও আমল মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। দুনিয়ার সব মানুষই ঈমান ও নেক আমলের নিয়ামত লাভে আল্লাহতায়ালার রহমতের প্রত্যাশী। কারণ তাঁর রহমত ছাড়া কোনো মানুষই ঈমান লাভ করতে পারে না। ঈমান ব্যতীত নেক আমল পরকালে কোনো কাজে আসবে না।
ঈমান শব্দের অর্থ :বিশ্বাস করা, আনুগত্য করা, স্বীকৃতি দেওয়া, নির্ভর করা ও অবনত হওয়া। ইসলামের যাবতীয় ইবাদত ও নেক আমলের বুনিয়াদ হচ্ছে ইমান। ইসলামের পরিভাষায় ঈমান হলো- সৃষ্টিকুলের একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহর একত্ববাদ, ক্ষমতা ও গুণাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান ও ধারণা অর্জন করে তাঁর কাছে নিজেকে নিরঙ্কুশভাবে সঁপে দিয়ে প্রশান্তি অর্জন করা এবং অন্য সবকিছু থেকে নির্ভয় ও নির্ভীক হয়ে যাওয়া।
আমরা জানি, আমল মানে কর্ম বা কাজ; আমলে সালেহ মানে সেসব কাজকর্ম ও আচরণ, যা সৎ. ভালো, উৎকৃষ্ট, সঠিক, যথার্থ, গ্রহণযোগ্য ইত্যাদি। এ ছাড়াও আল্লাহর নির্দেশিত পথে সমঝোতা স্থাপন, মিলেমিশে চলা, নিষ্পত্তি করে নেওয়া, মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, সমঝোতা করে চলা, সন্ধি স্থাপন করা, মীমাংসা করে নেওয়া ও সংযমশীল হওয়া। অর্থাৎ ঈমান সহকারে আল্লাহ নির্দেশিত পথে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে যে কোনো সৎ ও কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করাই আমল অথবা ঈমান সহকারে ইসলামের বিধিবিধান মেনে জীবনযাপন করাই প্রকৃতপক্ষে আমল।
ঈমান কোনো ব্যক্তির জীবনে অমূল্য সম্পদ। যে ঈমান হারাবে, সে দুনিয়ায় নিকৃষ্ট জীবনযাপন করবে এবং মৃত্যুর পরের জীবনে জাহান্নাম হবে তার স্থায়ী ঠিকানা। ঈমান ছাড়া মৃত্যুবরণকারীর জন্য জান্নাতকে হারাম করা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা সুরা আল মায়েদার ৭২ আয়াতে এরশাদ করেন : নিশ্চয় যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তার জন্য অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।
ঈমান দুনিয়া ও আখেরাতে সব সাফল্যের চাবিকাঠি। যে ঈমান সহকারে নেক আমল করবে, তাকে আল কোরআনে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সুরা আন নাহলের ৯৭নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে : যে মুমিন অবস্থায় উত্তম আমল করবে, সে পুরুষ বা নারী হোক আমি তাকে দুনিয়ায় উত্তম জীবনদান করব। আখেরাতে তাদের প্রদান করব সর্বোত্তম আমলগুলোর প্রতিদান। এ আয়াতে নেককার মুমিনদের দুটি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে- উত্তম জীবন ও সর্বোত্তম আমলের প্রতিদান। এ আয়াতে যে উত্তম জীবনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা মুমিনরা দুনিয়াতেই লাভ করবে। এখানে উত্তম জীবনের অর্থ :আত্মতুষ্টি, মানসিক প্রশান্তি, হালাল রিজিক এবং আলল্গাহর ইবাদত ও আনুগত্যে প্রশান্তি লাভ করা। এসব কিছু মিলেই একজন মুমিনের দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে ওঠে। আখেরাতের জীবনে তার জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে অনন্ত জান্নাত।
যে কোনো আমল মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার পূর্বশর্তই হলো ঈমান থাকা। যদি কেউ অজস্র নেক আমল করে, কিন্তু তার ঈমানই না থাকে, তবে এসব নেক আমল আখেরাতে তার কোনো কাজে আসবে না। এমনকি যে কেউ ঈমান ব্যতীত সালাত, সাওম, হজ, জাকাত, সাদকা, কোরবানি, সমাজসেবা কিংবা অন্য যে কোনো ভালো কাজই করুক না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না। এ জন্য আল্লাহতায়ালা আল কোরআনে নেক আমলের প্রতিদান পাওয়ার শর্ত হিসেবে বারবার ঈমানকে জুড়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা সুরা তাহারের ১১২নং আয়াতে এরশাদ করেন : যে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করবে, সে কোনো জুলুম বা ক্ষতির আশঙ্কা করবে না।
সুরা আল আম্বিয়ার ৯৪নং আয়াতে আল্লাহ আরও এরশাদ করেন : যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে, তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবে না। আমি তো তা লিপিবদ্ধ করে রাখি। এই আয়াতগুলো পাঠে জানা যায়, আমলে সালিহ বা নেক আমলের দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্ত হলো ঈমান থাকা। কোরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, ‘ঈমান ছাড়া কোনো নেক আমলই আল্লাহতায়ালার দরবারে কবুল হবে না। সুতরাং দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য ঈমান আনা অত্যন্ত জরুরি।