নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ শেখ হাসিনা: রামনাথ

0 221

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বৃহস্পতিবার ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। 

গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এর মধ্যদিয়ে দেশটির জনগণের সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এই অঞ্চলে দেশটির অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।’

বঙ্গবন্ধু-কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ‘বিদ্রোহী’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বলেছেন, ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে গেস্ট অফ অনার হিসেবে যোগ দিয়ে রামনাথ কোবিন্দ এসব কথা বলেন।

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বৃহস্পতিবার ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি।

সামরিক সরকারের যাঁতাকল আর বার বার হত্যাচেষ্টার পরও দৃঢ়তার সঙ্গে দেশকে এগিয়ে নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন রামনাথ কোবিন্দ।

তিনি বলেন, “কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’-এর মতো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

এরপর ভাঙা বাংলায় নজরুলের সেই কবিতা পাঠ করে শোনান রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ-

‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত,

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না

অত্যাচারীর খড়্‌গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত!’

বক্তব্যের শুরুতে ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলায় বলেন, ‘আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।’

গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যদিয়ে দেশটির জনগণের সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এই অঞ্চলে দেশটির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের কথা সামনে এনে রামনাথ বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ভারত সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। বন্ধুপ্রতীম বাংলাদেশের জন্য সাধ্যমতো সবকিছু করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

‘সাম্প্রতিককালে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, মানুষে মানুষে সম্পর্ক এবং বহুমাত্রিক আলোচনার ক্ষেত্রই প্রমাণ করে দুই দেশের বন্ধুত্বের গভীরতা ও টেকসই সম্পর্ক। আর এই গভীর বন্ধুত্ব হয়েছে পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদার ভিত্তিতে।’

ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং বন্ধুত্বকে আরও এগিয়ে নিতে জনগণের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের যে ত্যাগ-তিতিক্ষা তা প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রামনাথ বলেন, ‘ইউনেস্কোর প্রামাণ্য দলিলের স্বীকৃতি পাওয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রশ্নে আমাকে বিশেষভাবে আন্দোলিত করে।’

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে কোবিন্দ বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের হৃদয় যেমন খুলে দিয়েছিল তেমনি ঘরও খুলে দিয়েছিল। কারণ আমাদের ভাই-বোনদের আশ্রয় দেয়া আমাদের দায়িত্ব ছিল।’

জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে রাষ্ট্রপতি রামনাথের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি, যারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তারা বোঝেনি যে বুলেট আর সহিংসতা একটি আদর্শকে ধ্বংস করতে পারে না। কারণ আদর্শ লাখো মানুষের মনে বেঁচে থাকে।’

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানোয় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনে অংশ নিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটা আমার কাছে অনেক সম্মানের। এটি আসলে দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন। করোনা মহামারির পর এটা আমার প্রথম বিদেশ সফর। আমি বাংলাদেশে এসেছি।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.