ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দীনের হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

0 270

কিশোরগঞ্জ সদর এলাকার চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দীন হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং চিল্লারত অবস্থায় আত্মগোপনে থাকা হত্যাকারী মোয়াজ্জিন জাকির হোসেন’কে লক্ষীপুর হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গত ০৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখ আনুমানিক সকাল ০৬০০ ঘটিকায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানাধীন কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে অচেতন অবস্থায় গুরুতর জখমপ্রাপ্ত একজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ উক্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করলে আনুমানিক সকাল ০৯৩০ ঘটিকায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহত রমিজ উদ্দিনের পাঞ্জাবির পকেটে থাকা কাগজ পত্রের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। মৃত ব্যক্তির নাম রমিজ উদ্দিন (৬৫), পিতা-মৃত মোহাম্মদ আলী, সাং-মান্দারটেক, থানা-মনোহরদী, জেলা-নরসিংদী। উক্ত ঘটনায় নিহত রমিজ উদ্দিনের ছেলে বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৬ তারিখ ০৩ অক্টোবর ২০২১, ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।

নিহত রমিজ উদ্দিন একজন প্রবাসী ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সাল হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালেয়েশিয়া’তে অবস্থান করেছেন। ইতিপূর্বে ২০০৬ সাল হতে নিহত রমিজ উদ্দিন গরু ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করেন। বর্তমানে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে খামারের মাধ্যমে লালন-পালন করে বৃহৎ আকারে গবাদী পশুর ব্যবসা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর অভিযানে গত লক্ষীপুর জেলার একটি মসজিদে চিল্লারত অবস্থায় উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মোঃ জাকির হোসেন (৩৬), পিতা-আঃ আউয়াল, সাং-জিগতলা লেংগুড়া, থানা-কলমাকান্দা, জেলা-নেত্রকোনা’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জাকির হত্যাকান্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত জাকির’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, বিগত ০৫ বছর যাবৎ নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত আছে। উক্ত এলাকায় নিহত রমিজ উদ্দিন একজন বিত্তশালী উঠতি ব্যবসায়ী। মূলতঃ ভিকটিমের অর্থ আতœসাৎ করার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত উক্ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করে। গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, নিহত রমিজ উদ্দিন যেহেতু গরু ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত ও খামার প্রতিষ্ঠা করছে তাই কমমূল্যে গরু  কেনার ব্যপারে প্রলুব্ধ করে। গ্রেফতারকৃত জানায় তার বাড়ী নেত্রকোনা জেলার সামীন্তবর্তী গ্রামে সেখানে কম মূল্যে গরু পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃত কমদামে ক্রয়-বিক্রয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ঘটনার ১০/১২ দিন পূর্বে নিহত রমিজ উদ্দিনকে গরু ক্রয়-বিক্রয়ের স্থানে নিয়ে গিয়েছিল।

গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, নিহত রমিজ উদ্দিন গ্রেফতারকৃতের দ্বারা আশ্বস্ত ও প্রলুব্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে গত ৩০  সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে ব্যাংক হতে ৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। অতঃপর গত ০২ অক্টোবর ২০২১ তারিখ রাতে নিহত রমিজ উদ্দিনকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং পরবর্তীতে বড়পুল এলাকায় যায়। উক্ত স্থান হতে রিক্সাযোগে ঘটনাস্থল সদর থানাধীন কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় যায় এবং নির্জন এলাকায় অবস্থান নেয়। গ্রেফতারকৃত তখন নিহত রমিজ উদ্দিন কে জানায় গাড়ীতে করে গরু এখানে আসবে এবং তারা সেখানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে থাকে। রাত আনুমানিক ০১:৩০ ঘটিকার সময়  রমিজ উদ্দিনকে কৌশলে ডাউরিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলা বাগানে নিয়ে যায়, অতঃপর যখন রমিজ উদ্দিনকে  গ্রেফতারকৃত জাকির  হোসেন তার সাথে থাকা হাতুড়ী দিয়ে পেছন থেকে বসে থাকা অবস্থায় রমিজ উদ্দিনের মাথায় সজোরে আঘাত করে। হাতুড়ীর আঘাতে রমিজ উদ্দিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপালে, মুখে, বাম চোখের উপর ও নীচে ও মাথার বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর আঘাত করে। পরবর্তীতে সে রমিজ উদ্দিনকে মৃত ভেবে উক্ত স্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, সে ঘটনার প্রায় ২ মাস পূর্বে নিহত রমিজ উদ্দিন কে হত্যা করে টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। এছাড়া হত্যার উদ্দেশ্যে বহনকৃত হাতুড়িটি সে গমনাগমনের রাতে ক্রয় করে একটি  ছোট ব্যাগে বহন করেছিল। গ্রেফতারকৃত জানায় লুটকৃত অর্থের ১ লক্ষ টাকা সে খরচ করেছে এবং বাকী অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে গচ্ছিত রেখেছে।

গ্রেফতারকৃত জানায়, হত্যাকান্ডের পর সে কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে আসে এবং নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আযানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আযান দেয় ও নামাজে অংশগ্রহন করে ও মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে পড়ায়। গ্রেফতারকৃত ধারণা করেছিল রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর কথা কেউ জানতে পারবে না তাই সে তার সাধারণ রুটিন অনুযায়ী চলাচল করতে থাকে। কিন্তু ০৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখ সকাল ১১:০০ ঘটিকার দিকে রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পারলে জাকির হোসেন ভয় পেয়ে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে নরসিংদীর মাধবদী, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ে, ময়মনসিংহ সদরে, সিলেট জেলার ফেঞ্জুগঞ্জ এবং সিলেট থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ এসে আত্মগোপনে থাকে। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি  মসজিদে আসে এবং সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় গমন করে আত্মগোপনে থাকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.