৮ বিভাগে ১০০ শয্যার ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রের উদ্বোধন

0 519

 দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা, মানে একেবারে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ যারা তাদের চিকিৎসাটা যাতে বিনা মূল্যে দেয়া যেতে পারে, সে ধরনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।’

এক বছরের কম বয়সী শিশু আর ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার কথা পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ রোববার দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ভিত স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রুত ও মানসম্মত কাজ যেন হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা, মানে একেবারে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ যারা তাদের চিকিৎসাটা যাতে বিনা মূল্যে দেয়া যেতে পারে, সে ধরনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।’

দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৯ থেকে ১ দশমিক ৩৩-এ দাঁড়িয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর বেশি আর কমানোর দরকার নেই। আমাদের নতুন জনসংখ্যাও দরকার, আর যুবসমাজও দরকার। এটা আমাদের দেখতে হবে।’

একটি মানুষও টিকার বাইরে থাকবে না

করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতি এবং নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান। ৩১ কোটির বেশি ডোজ টিকার সংস্থান হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি মানুষও যেন টিকার বাইরে না থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মোকাবিলার জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনাও দিয়েছি, তা ছাড়া টিকা সংগ্রহ করা, টিকা ক্রয় করা, পরীক্ষা করা এবং ভ্যাক্সিনেশন-পৃথিবীর বহু দেশ কিন্তু বিনা পয়সায় দেয় না, অনেক উন্নত দেশও দেয় না। বাংলাদেশে আমরা কিন্তু ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দিচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কারণ মানুষের সেবা করাটাই তো আমাদের বড় কাজ। এ জন্য বাজেটে আমরা আলাদাভাবে টাকাও বরাদ্দ রেখে দিয়েছি। যত টাকাই লাগুক আমাদের এই কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখব। সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

টিকা নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে ভয় পান। গায়ে সুই ফোঁটাবে সেই ভয়ও আছে। নানা ধরনের অপপ্রচারও ছিল, কিন্তু সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, করোনাভাইরাস এবং নতুন আবার আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট দেখা গেছে ওমিক্রন, এর হাত থেকে বাঁচার জন্য, এটি সব থেকে বেশি শিশুদের ধরছে, সে জন্য ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।

‘তা ছাড়া আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা ভয় না পেয়ে টিকাটা নিয়ে নেন। টিকা নিলে পরে আপনার জীবনটা রক্ষা পাবে। হয়তো কিছুদিন ভোগাবে, কিন্তু জীবন রক্ষা পাবে।’

সরকারপ্রধান হিসেবে সব সময় দেশের মানুষের সুরক্ষা চান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলতে হবে। আর শীতকালে প্রাদুর্ভাবটা বাড়ে। আর সাধারণত আমাদের দেশে শীতকালে সর্দি-কাশিও হয়। সেদিকে লক্ষ রেখে সবাই মাস্ক ব্যবহার করবেন। খুব বেশি জনসমাগমে যাবেন না। সেখান থেকে একটু নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন। আর বড় সমাবেশ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখবেন।’

শিশুদের শরীরে টিকা দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা পেলে সরকারও সেভাবে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে উঠুক। আর এই অতিমারি, এটাকে যেভাবে হোক আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’

চিকিৎসা খাতে গবেষণায় জোর

নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা গবেষণার প্রতিও মনোযোগী হতে দেশের চিকিৎসকদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যারা ভালো নামিদামি চিকিৎসক হয়ে যান, তারা তো চিকিৎসাসেবা দিতেই ব্যস্ত থাকেন। কিছুটা সময় যদি আপনারা ব্যয় করেন বা গবেষণায় নজর দেন তাহলে আমাদের দেশের পরিবেশ, আমাদের দেশের আবহাওয়া, আমাদের দেশের জলবায়ু, আমাদের দেশের সব কিছু মিলিয়ে- এই দেশের মানুষের কী কী ধরনের রোগ দেখা দেয়, তা প্রতিরোধের শক্তি কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া যায়।’

চিকিৎসা গবেষণা খাতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে জানান তিনি।

জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব ব্যাপার যখন বেশি দেখা যাচ্ছে, তখন স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মানা এবং কী কী স্বাস্থ্যবিধি মানলে পরে নিজেকে সুস্থ রাখা যায় এবং খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে সব ব্যাপারে সবাইকে একটু বিশেষভাবে সচেতন হওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’

দেশে বিশেষায়িত হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ১৩ বছরে ১২টি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১১টি বিশেষায়িত হাসপাতালকে সম্প্রসারণে উন্নীত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনায় মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

ঢাকা মেডিক্যালে একসঙ্গে ৫০০০ রোগীর চিকিৎসা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলমান আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দেশের চিকিৎসাসেবায় প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জীর্ণদশা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেখানে সম্পূর্ণ আধুনিক একটি হাসপাতাল তৈরি করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যে নিয়েছি, তার প্ল্যানটাও করে ফেলেছি। সেখানে যাতে ৫ হাজার রোগী একসঙ্গে চিকিৎসা পায় এবং বিশেষায়িত চিকিৎসাও যেন সেখানে পায়, তার ব্যবস্থা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জন্য আমরা তৈরি করেছি।’

শিগগিরই এর নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে এটা বাস্তবতা যে আমি সম্পূর্ণ মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করতে পারব না। আমাদের ধাপে ধাপে একেকটা উইং করতে হবে, যাতে রোগীর চিকিৎসাটাও চলে, উন্নয়নের কাজটাও হতে পারে, সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ৭৫-পরবর্তী সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কখনও দেশের মানুষের উন্নয়নে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে জানান তিনি।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য প্রত্যন্ত এলাকায় গড়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তাদের বন্ধ করার একটা উদ্দেশ্য ছিল যেটা তখনকার প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ওই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যদি চালু থাকে, তাহলে ওই অঞ্চলের সব মানুষ নাকি নৌকায় ভোট দেবে। সে জন্য এটা বন্ধ করে দেয়। তাদের রাজনৈতিক স্পৃহাটা বড় হয়ে যায়, মানুষের সেবাটা না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এটাই হচ্ছে বড় তফাত।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করার ফলে সেখান থেকে ৩০ রকমের ওষুধ মানুষকে বিনা মূল্যে আমরা দিচ্ছি। তা ছাড়া ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা, প্রেসার দেখা বা মাতৃত্বকালীন সেবা দেয়া- সব ব্যবস্থা এই কমিউনিটি ক্লিনিকে দেয়া হচ্ছে।’

ফলে মানুষের কর্মসংস্থান যেমন হয়েছে, তেমনি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করেন সরকারপ্রধান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.