দান-সদকা যেসব বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে

0 183

দান-সদকা একটি মহান ইবাদত। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে দান-সদকার গুরুত্ব অপরিসীম। যেসব ইবাদতের অসংখ্য পুরস্কারের কথা কোরআন-হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে দান-সদকা তার অন্যতম। শুধু বিপুল সওয়াব প্রাপ্তিই নয়; বরং দানের উপকারিতা নানামুখী। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত এবং অসংখ্য হাদিসে মানব সম্প্রদায়কে দানের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) দানের বহু উপকারিতার কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উম্মতকে বলে গেছেন।

সম্পদ বৃদ্ধির কারণ : দান-সদকার কারণে সম্পদ হ্রাস পায় না; বরং দানের মাধ্যমে সম্পদের অতুলনীয় প্রবৃদ্ধি ঘটে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন কোনো দিন যায় না যেদিন দুজন ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমন করেন না, তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং বলেন, হে আল্লাহ! দানকারীর মালের বিনিময় দান করুন (বিনিময় সম্পদ বৃদ্ধি করুন), দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করে বলতে থাকে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করুন।’ (বুখারি : ১৪৪২; মুসলিম : ১০১০)। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দান-সদকা সম্পদ বৃদ্ধি বৈ কমায় না।’ (মুসলিম : ২৫৮৮)

বিপদাপদ দূর করে : দান-সদকার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়। দানকারীর জন্য বিপদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। যার ফলে বিপদাপদ দানকারীকে স্পর্শ করতে পারে না। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা অতিসত্বর দানের দিকে ধাবিত হও, কেননা বিপদাপদ দানকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (শুয়াবুল ঈমান : ৩০৮২; আত তারগিব : ১২৯৯)। ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, দানের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, বিপদ দূরীভূত করা। বিপদাপদ দূরীকরণে দানের প্রভাব অতুলনীয়। এমনকি পাপাচারী এবং কাফেরের দানেরও প্রভাব রয়েছে। দানের মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হওয়ার বিষয়টি সর্বজনবিদিত ও বাস্তব অভিজ্ঞতায় স্বীকৃত। (আল ওয়াবিলুস সায়্যিব মিনাল কালিমিত তয়্যিব, পৃ : ৩১২)

আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে : বান্দা গুনাহে লিপ্ত হলে পরাক্রমশালী আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন। গুনাহ করার পর গুনাহগার ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান করলে আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়ে যায় এবং তার ক্ষমা লাভের পথ সহজ হয়। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সদকা আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে।’ (তিরমিজি : ৬৬৪; ইবনে হিব্বান : ৩৩০৯)

অপমৃত্যু রোধ করে : দান-সদকা দানকারী ব্যক্তিকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সদকা অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি : ৬৬৪; ইবনে হিব্বান : ৩৩০৯)। অপমৃত্যু বলতে ওইসব মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে যা থেকে স্বয়ং নবীজি (সা.) পানাহ চেয়েছেন। তা হলো পানিতে পড়ে, আগুনে পুড়ে, ওপর থেকে পতিত হয়ে, যুদ্ধ থেকে পলায়নরত অবস্থায় বা এ ধরনের কোনো কারণে মৃত্যুবরণ করা। হঠাৎ মৃত্যুকেও কেউ কেউ অপমৃত্যু বলেছেন।’ (মেরকাত : ৪/১৩৪১)

পাপ মোচন করে : হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি নবীজি
(সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তিনি বললেন, হে মুয়াজ! আমি কি তোমাকে প্রভূত কল্যাণ লাভের পথ বাতলে দেব না? অতঃপর নবীজি (সা.) বললেন, রোজা (জাহান্নামের আগুনের জন্য) ঢালস্বরূপ আর সদকা পাপকে মিটিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। (তিরমিজি : ২৬১৬; ইবনে মাজা : ৩৯৭৩)

হাশরের ময়দানে ছায়া দান করবে : হাশরের ময়দানে সূর্যের প্রখর উত্তাপের সময় আল্লাহর আদেশে দান-সদকাকারীকে ছায়া দেওয় হবে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হাশরের ময়দানে মানুষের মাঝে চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক দানকারী ব্যক্তি তার সদকার ছায়ার আশ্রয়ে
থাকবে। (মুসনাদে আহমদ : ১৭৩৩৩; ইবনে হিব্বান : ৩৩১০)

আরশের নিচে ছায়া পাবে : হাশর দিবসে যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না সেদিন সাত
শ্রেণির মহাসৌভাগ্যবান মানুষকে আল্লাহ আরশের নিচে ছায়া দেবেন, তাদের
অন্যতম দানকারী ব্যক্তি।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ আরশের নিচে ছায়া দেবেন। তাদের এক শ্রেণি হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে এমনভাবে গোপনে দান করেছে যে তার বাম হাত জানতে পারেনি তার ডান হাত কী দান করেছে। (বুখারি : ৬৬০; মুসলিম : ১০৩১)

কবরে আগুনের উত্তাপ রোধ করবে : দান-সদকা দানকারী ব্যক্তিকে কবরের আগুনের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই সদকা দাতাকে কবরের আগুনের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে। (তাবরানি : ৭৮৮; শুয়াবুল ঈমান : ৩০৭৬)

রোগ নিরাময় করে : হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মধ্যকার অসুস্থ
ব্যক্তিদের দানের মাধ্যমে চিকিৎসা কর। (বায়হাকি : ৬৫৯৩)

হায়াত বৃদ্ধি করে : দান করলে আল্লাহ তায়ালা দানকারীর হায়াত বাড়িয়ে দেন। হজরত আমর ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলমান ব্যক্তির সদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে। (তাবারানি, হাদিস : ৩১)। ইমাম নববী রহ. ‘হায়াত বৃদ্ধি’র উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ হায়াতের মধ্যে বরকত দান করবেন, ফলে অল্প সময়েও অধিক ইবাদত-বন্দেগি করার তওফিক লাভ হবে। এ ছাড়াও পবিত্র হাদিস শরিফে দানের আরও বহু উপকারিতা ও ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বেশি বেশি দান করার এবং দানের মাধ্যমে ইহজাগতিক ও পরলৌকিক প্রভূত কল্যাণ লাভের তওফিক দান করুন। আমিন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.