সিগারেটের দাম ১০ শতাংশ বাড়ালে চাহিদা কমবে ৭ শতাংশ: গবেষণা
দেশে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে সিগারেটের চাহিদা ধনীদের চেয়ে অধিক হারে কমে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, দাম যদি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষের সিগারেটের চাহিদা ৯ শতাংশ কমে আসে।
অন্যদিকে, একই হারে দাম বৃদ্ধির ফলে ধনীদের সিগারেটের চাহিদামাত্র চার শতাংশ কমে আসে। সার্বিকভাবে দেখা গেছে, সমপরিমাণ দাম বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে ধূমপায়ীর হার গড়ে ৭.১ শতাংশ কমে আসবে।
আর্ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যোবাকোনোমিক্সের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণায় এই তথ্যগুলো উঠে আসে।
আজ বুধবার (১২ জানুয়ারি) এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালিত দুটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রুমানা হক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের গবেষক এস এম আব্দুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের গবেষক মো. নাজমুল হোসেন।
গ্যাটস’র ২০১৭-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করছে প্রায় তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষ। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহারের পরিমাণ বেশি। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। তবে অতি উচ্চবিত্তের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করেন নারীরা। যাদের ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করলে এর ব্যবহারের হারও কমে আসে এটা বিশ্বজুড়ে পরীক্ষিত। তবে সুনির্দিষ্টভাবে সিগারেটের দাম বৃদ্ধিতে এর ব্যবহার কমলেও আনুপাতিক হারে তা বৃদ্ধির তুলনায় কম। ফলে কাঙ্ক্ষিত হারে সিগারেটের ব্যবহার কমাতে সিগারেটের ওপর উল্লেখযোগ্য হারে কর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এজন্য অতিদ্রুত সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।
আরেকটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হোসেন বলেন, দেশে তামাকের ওপর বহুস্তরভিত্তিক জটিল কর ব্যবস্থা থাকায় বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন মাত্রায় কর আরোপ করা হয়। আর প্রত্যেক স্তরের সিগারেটে তুলনামূলক ভিত্তিমূল্য কম হওয়ায় এই কর ব্যবস্থায় ধূমপান নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও, দেশে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম এবং করের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কম হওয়ায় তামাক কোম্পানিগুলো নিম্নস্তরের সিগারেটের বাজার বিস্তৃত করছে। যার ফলে সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আয় হারাচ্ছে।
এই গবেষণায় উঠে এসেছে সিগারেট কোম্পানিগুলো বাজারে নিম্নস্তরে নতুন সিগারেটের ব্র্যান্ড চালুর ফলে সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ২৭৩.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হারিয়েছে। সেই সঙ্গে যদি সরকার নিম্নস্তরের সিগারেটের ভিত্তি দাম ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৪৫ টাকা করতো এবং এই স্তরে করের হার ৫৫ শতাংশের পরিবর্তে ৬৫ শতাংশ করা হতো তাহলে সরকার ১৯৫৮.৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করতে পারতো বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়।
অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সুনির্দিষ্ট করারোপ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করে এর ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে হবে এবং একই সঙ্গে সিগারেটের খুচরা বিক্রি বন্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্যবসার প্রসারের জন্য ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করছে এবং সরকারের নানা নীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।