নারায়ণগঞ্জে ভোটগ্রহণ শুরু
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের সব ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে ভোটকেন্দ্রে চৌহদ্দির মধ্যে কোনো ভোটার উপস্থিত থাকলে ৪টার পরেও ভোট নেওয়া হবে।
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ব্যালটে লড়ছেন আইভী। আর তৈমূর ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন হাতি প্রতীক নিয়ে। ভোট শেষ হলেই বোঝা যাবে হাতির জোর বেশি, নাকি পালে হাওয়া নিয়ে জোর বেশি নৌকার। নগরের নতুন অভিভাবক যিনিই হোন, বরাবরের মতো তার কাছে বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ নগরীকে। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে জেলা পুলিশ-প্রশাসন। শনিবার রাত থেকেই নগরীর নিরাপত্তা জোরদার করতে মাঠে নেমেছে ১৮ প্লাটুন বিজিবি। নির্বাচনী সহিংসতা এড়াতে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশেনের সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল অঞ্চলের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, নারী ভোটার দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের চারজন। ২৭টি ওয়ার্ডে ১৯২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষের সংখ্যা এক হাজার ৩৩৩ ও অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯৫টি। প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন। একইসঙ্গে তিনটি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৯ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রগুলোতে ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনজন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
তিনি জানান, প্রতিটি কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শনিবার রাতেই নারায়ণগঞ্জে ১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাবের ১০০ টিম, সাদা পোশাকে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে থাকবে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নির্বাচনের দিন যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশসহ তিনটি স্তুরে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
তিনি জানান, নির্বাচনী পরিবেশ উৎসবমুখর। কিন্তু কয়েকটি ওয়ার্ডে সমস্যা আছে। যা খুব জটিল কিছু না। নির্বাচনকে কেন্দ্র এমন কিছু এলাকা এরকম থাকে। তারপরও আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে ৩০টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ভোটের দিন নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া কেউ চলাচল করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)।
তিনি বলেছেন, আমাদের তরফ থেকে নির্বাচনী কোনো সহিংসতার আশঙ্কা নেই। নির্বাচনের দিন কোনো বহিরাগতকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেবো না। ভোটের দিন সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে চলাচল করতে দেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের শুরু থেকেই সরকারি দলের মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীকের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।