জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙতে রাজি শিক্ষার্থীরা

0 473

ড. জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙতে রাজি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে তারা অনশন ভাঙবেন বলে জানা গেছে। এর আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বুধবার ভোর চারটার কিছুক্ষণ আগে তিনি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। ক্যাম্পাসে এসে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন বলে নিশ্চিত করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। গত কয়েকদিন ধরে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এ নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি একটি কলাম লিখেছিলেন ড. জাফর ইকবাল।

গতকাল ছিল আন্দোলনের ১৩তম দিন। প্রথম ছয় দিনে দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বেলা তিনটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাঁদের একজনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ি চলে যান তিনি। গত শনিবার রাত আটটা থেকে আন্দোলনরত আরও পাঁচ শিক্ষার্থী অনশনরতদের সঙ্গে যোগ দিয়ে গণ-অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। আজ সকাল সোয়া ছয়টা পর্যন্ত ২৮ জনের মধ্যে ২০ জনই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ৮ জন অনশনস্থলে ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষক একাধিকবার শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমনকি গতকাল সন্ধ্যায় আন্দোলনরত কয়েক শ শিক্ষার্থী অনশন থেকে সরে আসার ‘সম্মিলিত অনুরোধ’ জানালেও তাঁরা সে আহ্বান ফিরিয়ে দেন।

অনশনকারী এবং আন্দোলনকারীরা মুহম্মদ জাফর ইকবালকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের নানা সমস্যার বিষয়ে অবহিত করেন। এ সময় পুলিশের মারধর নিয়ে শিক্ষার্থীরা মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পুলিশ বেধড়ক মারধর করে উল্টো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছে। এসব শুনে মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘চিন্তা কোরো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, মামলা প্রত্যাহার হবে।’

মুহম্মদ জাফর ইকবাল আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত অনশনকারীদের সঙ্গে ছিলেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর একটা স্মারকগ্রন্থের জন্য আমার কাছে একটা লেখা চাওয়া হয়েছিল। সেই লেখাটার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়েছে। আমি এই সম্মানীর টাকাটা নিয়ে এসেছি। এই আন্দোলনের ফান্ডে টাকাটা দিচ্ছি। তোমরা রাখো। এবার পারলে আমাকে অ্যারেস্ট করুক।’

এরপর মুহম্মদ জাফর ইকবাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি চরম অমানবিক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘আজকে তোমরা একসঙ্গে অনশন ভাঙবে, আমাকে কথা দিয়েছ। তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ! বাংলাদেশের ৩৪ জন ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন, এখানকার ভাইস চ্যান্সেলর পদত্যাগ করলে তাঁরা পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ, এটা দেখতে। যদিও আমার ধারণা, এ শখ মিটবে না। তবে তোমরা যেটা করেছ, সেটার তুলনা নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি ইয়াং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

উল্লেখ্য, মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাবিপ্রবির অধ্যাপক হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর অবসরে যান। এর আগে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। অবসরের পর তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। গতকাল রাতে ঢাকা থেকে সড়কপথে তিনি সিলেটে আসেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.