র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দেওয়া চিঠি ব্যক্তিগত: ইইউ রাষ্ট্রদূত
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)- এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেক ইইউকে যে চিঠি দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং ইইউ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি বলে জানিয়েছেন, ঢাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘এটাকে আমরা ব্যক্তিগত মতামত বলতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেকেরই যার যার নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দেওয়া ওই চিঠির শুরুতেই ইভান স্টেফানেক বাংলাদেশের ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ উল্লেখ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রসঙ্গ টানেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে তিনি লিখেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনসহ বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল অমানবিক আচরণ করছে, যা আমি আপনার নজরে আনতে চাই।’
জোসেপ বোরেলেরকে লেখা তিন পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে ইভান স্টেফানেক লিখেছেন, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। কারণ, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক, যিনি আগে র্যাবের প্রধান ছিলেন, তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশেষ করে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হককে ২০১৮ সালের মে মাসে হত্যাসহ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ম্যাগনিটাইনেজ বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের আরও ছয়জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গত কয়েক বছর বারবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং মার্কিন সিনেটের বিভিন্ন কমিটি র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়ে আসছিল।
চিঠিতে ইভান স্টেফানেক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের বিষয়ে লিখেন, পরপর দুইবার—২০১৮ ও ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে মান উত্তরণের জন্য এই মর্যাদা বাংলাদেশ পাবে। বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশের চেয়ে অনেকগুলো সূচকে এগিয়ে রয়েছে। বিশেষত দুই দশক ধরে ছয় শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। ভবিষ্যতে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হলে বাংলাদেশের আরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা বড় বাধা হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি।
এ ছাড়া ইভান স্টেফানেক কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার মেন’ প্রতিবেদন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গও টেনেছেন চিঠিতে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং রাজস্ব বিভাগ আলাদা আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারও এক মাস আগে গত বছরের নভেম্বরে র্যাবকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে চিঠি লিখে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক ১২টি মানবাধিকার সংগঠন।