চট্টগ্রামে আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণ

0 454

লোহাগাড়ার এক গৃহবধূর করা মামলায় এক আসামির স্থলে আদালতে অন্য ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গত রবিবার চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নকল আসামির পক্ষের আইনজীবীকে আদালত তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে আসামি সেজে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে আসা ব্যক্তিকে ওইদিনই অন্তর্বর্তীকালীন কারাবাসে পাঠিয়েছেন ওই আদালতের বিচারক মাহমুদুল হক। কারাগারে যাওয়া আসামির নাম মামুনুর রশিদ (২২)। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার ওয়াজউদ্দিন সিকদার পাড়ার মফিজুর রহমানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতে একটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা গৃহবধূ সাবিনা আক্তারের (সি আর- ৫২/২১) মামলার আসামি আবু তাহের (৪০) সেজে জামিনের আবেদন করেছিলেন মামুন। মারধরের অভিযোগে তিনি গত বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি আবু তাহেরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন। মামলাটি বিচারের জন্য গত রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদলি হয়ে আসে। চার আসামি আগেও জামিনে ছিলেন। রবিবার আদালতে পূর্বশর্তে আসামিরা জামিন আবেদন করলে মামলার বাদী সাবিনা বিচারককে জানান, আত্মসমর্পণকারী এই আসামি আবু তাহের নন। আসামি আবু তাহেরকে তিনি চেনেন। আসামিরা বাদীর স্বামীর চাচাত ভাই। ২ নম্বর আসামি আবু তাহের মধ্যপ্রাচ্যে চাকুরি করেন। তিনি ঘটনার পর থেকে দেশে নেই। এসময় বিচারকের জিজ্ঞাসায় আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি নিজেকে আবু তাহের পরিচয় দেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে থাকতেন এবং সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু আদালতে তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনো পাসপোর্ট বা কাগজপত্র দাখিল করতে পারেননি তিনি। কোন দেশের কোন শহরে থাকেন বা চাকুরি করেন, তাও জানাতে পারেননি। পরে তিনি নিজেই আবু তাহের সেজে আত্মসমর্পণ করার কথা স্বীকার করেন। এসময় আসামির আইনজীবীর কাছে বিচারক জানতে চান, এই আসামিকে তিনি চেনেন কি না। আইনজীবী এমএ মোজাফফর বিচারককে জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে আসামিকে চেনেন না। অন্য আসামিরা এই ব্যক্তিকে তার কাছে নিয়ে এসেছেন। এরপর বিচারক আইনজীবীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফেলতির অভিযোগ এনে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- ৬ এর পেশকার মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে আসামি মামুনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এমএম) জুয়েল দেব-এর আদালতে মামলা (সি আর- ৪৬৭/২২, কোতোয়ালী) করেন। আদালত দণ্ডবিধির ৪১৯ ধারায় মামলাটি আমলে নিয়ে আসামি মামুনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখান। এমএম আদালতের পেশকার নুর-এ-খোদা এ পূর্বকোণকে বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ৩ মার্চ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
জানতে চাইলে আসামি মামুনের আইনজীবী এমএ মোজাফফর পূর্বকোণকে বলেন, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। অন্য আসামিদের সঙ্গে তিনি এসেছিলেন। তিনি বলেন, আজ (গতকাল মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় আমি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শোকজের জবাব দিয়েছি।
জানতে চাইলে, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মামুনুর রশিদ পূর্বকোণকে বলেন, আইনজীবী আদালতে শোকজের জবাব দিয়েছেন।
এদিকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলার আদেশে বলা হয়, এর আগে ১৮ জানুয়ারি ৪ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে লাভ করেন। সেদিন বাদি সময়ের দরখাস্ত দিয়েছিলেন। ওইদিন চার আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু অন্য আসামিদের জামিনের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করলেও নথিতে আবু তাহেরের পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। মামলাটি স্থানান্তর হয়ে এই আদালতে আসার পর নিয়ম অনুযায়ী ২২ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মসমর্পণ করে পূর্বশর্তে জামিনের আবেদন জানান। এদিন বাদি ২ নম্বর আসামি আবু তাহের নয় উল্লেখ করেন। এসময় আসামি দৃঢ়তার সাথে তিনিই আবু তাহের বলে আদালতে দাবি করেন। কিন্তু আসামি আবু তাহেরের বয়সের সাথে আত্মসমর্পণকারী আসামির মিলে না। তাই তাকে জেরার এক পর্যায়ে তিনি আবু তাহের নন বলে স্বীকার করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.