চট্টগ্রামের ছেলে ইউক্রেন যুদ্ধে
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চৌধুরী হাট স্টেশন থেকে দাঁতারাম সড়ক ধরে ১০০ মিটার গেলেই হালকা আকাশি রঙের বহুতল ভবন ‘সুব্রত নিলয়’। এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় বড় ছেলে বিজয় সরকারকে নিয়ে বাস করেন রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তা সুব্রত সরকার। চাকরি থেকে অবসরের পর ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও ক’দিন ধরে সুব্রত সরকারসহ তার পরিবারের দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
এর বড় কারণ হচ্ছে- সুব্রত-ঝর্ণা দম্পতির ছোট ছেলে অজয় সরকার এখন যুদ্ধের ময়দানে। ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের হয়ে সম্মুখ সমরে লড়ছেন তিনি। তাই রুশ বাহিনীর একেকটি গোলা যখন কৃষ্ণসাগর পাড়ের দেশটিকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে- তখন প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগর পাড়ে বসে অজয়ের সুস্থতার জন্য ¯্রষ্টার কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন পরিবার-স্বজন সবাই।
চাটগাঁর ছেলে অজয় কীভাবে ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিলেন- সেই গল্প শোনালেন তার বড় ভাই বিজয় সরকার। তিনি পূর্বকোণকে জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। দুই দেশের চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের হয়ে নাগরিকদের অংশ নিতে আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার আহ্বানে সাড়া দিয়েই ইউক্রেনের নাগরিক হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন অজয়।
পেশায় চিকিৎসক বিজয় সরকার জানান, ১৯৯৪ সালে ইউক্রেন যান অজয় সরকার। ২০০২ সালে ইউক্রেনীয় এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর ২০০৬ সালে সে দেশের নাগরিকত্ব পান। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানী কিয়েভ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরের শহর জাপোরিঝিয়ায়। সেখানে পারিবারিক রঙের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তিনি। করোনার আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালে দেশে এসেছিলেন অজয় সরকার।
অজয়ের বাবা সুব্রত সরকার বলেন, কিশোর বয়সেই দেশ ছাড়ে অজয়। ইউক্রেনে থাকলেও নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো তার। গতকাল (শুক্রবার) সকালেও ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে ভালো আছে সে। তবে ক্যাম্পের পাশে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে রুশ বাহিনীর হামলার কথা জেনে ছেলের জন্য চিন্তা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের নাগরিক হিসেবে অজয় রুশ হামলা থেকে ‘দেশ বাঁচাতে’ লড়ছে- এ জন্য গর্ব হচ্ছে। তবে তার জীবন নিয়ে শঙ্কিত আমরা। অজয় যেন সুস্থ থাকে, ‘তার দেশ’ ইউক্রেন যেন দ্রুত যুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পায়- ¯্রষ্টার কাছে সেটাই প্রার্থনা করছি আমরা। অজয়ের মা, বড় ভাই, স্বজন থেকে শুরু করে সবাই তার জন্য দিনরাত প্রার্থনা করছেন।
ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সেখানে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের সহায়তায়ও কাজ করছেন অজয় সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরামর্শমূলক বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করছেন। শেয়ার করা সর্বশেষ ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশিদের পোল্যান্ড সীমান্তে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। যুদ্ধে জিতে জন্মভূমি বাংলাদেশে আসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন অজয় সরকার।