প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় হাদিসুরের পরিবার
বোমায় নিহত হাদিসের লাশটি যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় সেজন্যই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে ঢাকায় গেছেন নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের পরিবার।
সম্প্রতি ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যুদ্ধের মধ্যে হামলার শিকার হয়ে নিহত হন বাংলাদেশী এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে কর্মরত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছেছেন নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের পরিবারের মা-বাবাসহ তিন ভাইবোন। এর আগে রুশ রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন নিহত হাদিসের পরিবার।
নিহত পরিবারের সূত্রে জানা যায়, রকেট হামলার শিকার হয় বাংলাদেশী ২৯ নাবিক। এর মধ্যে বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজার সংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মো: আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির জ্যেষ্ঠ ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো: হাদিসুর রহমান আরিফ (২৯) ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও এ পরিবারে আরো দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে ও ছেলের লাশ ফিরে পাওয়ার অনিশ্চয়তায় পাগলপ্রায় তার পরিবার। এখন পরিবারের সকলকে নিয়ে ছেলের লাশ পাওয়ার জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছেন হাদিসুরের পরিবার।
নিহত হাদিসুরের মেঝভাই তারেক জানান, ভাইয়ার কত স্বপ্ন ছিলো। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ভাইকে। ভাইয়া বলেছিলেন, এবার বাড়িতে এসে ঘর তুলবেন, মা বৃদ্ধ বয়সে ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে পেলো না। মা-বাবার চিকিৎসা খরচ চালানোর মতো আর কেউ রইলো না, ভাইয়ার বেতনের টাকায় চলতো আমাদের ছোট দু’ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ। এখন আমাদের পড়াশোনা, মা-বাবার চিকিৎসা সবকিছুই বন্ধের পথে। কী দিয়ে কী করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। মা-বাবা শুধু পথ চেয়ে আছে কখন ভাইয়ার লাশ দেশে আসবে, কিন্তু লাশ সত্যিই দেশে আসবে কিনা এ নিশ্চয়তা ও পরিবারের অচলাবস্থার কথা জানাতেই ঢাকায় এসেছি। যে কোনোভাবেই হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমরা দেখা করবো। তাকে জানাবো আমাদের পরিবারের দুরবস্থার কথা।
নিহত হাদিসুরের মা-বাবা ছোটভাই প্রিন্সও একই কথা বলেন।
উল্লেখ্য, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ‘সমৃদ্ধি’ জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্যবোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেন শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ।