টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি, কারও গলা টিপেও ধরা হয়নি: প্রধানমন্ত্রী
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সমালোচনাকারীদের কড়া জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখন সবাই কথা বলতে পারেন। টকশো করতে পারেন। আমি জানি, সারাদিন টেলিভিশন টকশোতে কথা বলেও বলবে, ‘আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না’। অথচ কারও তো মুখ চেপে ধরা হয়নি। কারও তো গলা টিপেও ধরা হয়নি!
আজ সোমবার (১৬ মে) ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-এর বাস্তবায়ন পর্যালোচনার জন্য দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে সমালোচনা করেন, আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে অনেক ব্যয় হচ্ছে। তারা খরচের দিকটা দেখেন। ব্যয় হলেও এটা আমাদের কতটা সুফল বয়ে আনবে, মানুষ কতটা উপকৃত হবে, এটা দেখেন না। আমার অনুরোধ থাকবে- রাজধানীতে বসে সমালোচনা না করে গ্রামে যান। গ্রামাঞ্চলের বাস্তব চিত্র দেখেন; পরিবর্তনটা কোথায় হয়েছে, কতটুকু হয়েছে বুঝবেন। মানুষ যে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল ভোগ করছে, সেটা দেখতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমাদের লক্ষ্য। আমরা তাদের উন্নত জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এ প্রকল্পগুলো শেষ হলে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। তবে আমাদের সম্পদ ও অর্থের কার্যকর ব্যবহার ও অপচয়রোধ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, আমরা জানি, কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা ধাক্কা লেগেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সচেষ্ট আছি।
এরইমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘এজেন্ডা-২০৩০’ তথা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি আরও বলেন, এসডিজি একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ধারণা হলেও বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ পরিক্রমার সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এসডিজি প্রণয়নের প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে ২০১৩ সালে আমরা জাতিসংঘের কাছে মোট ১১টি অভীষ্টের প্রস্তাব করেছিলাম। এর মধ্যে ১০টি অভীষ্টই জাতিসংঘ হুবহু অনুসরণ করে, অবশিষ্ট অভীষ্টটিও অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে এসডিজি প্রণয়নকালের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন নীতি-কৌশল এসডিজির আদলে প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে সারাদেশে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩টি গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও কক্সবাজারে ৬৪০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে নতুন বাড়ি করে দিয়েছি; ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার নতুন বাড়ি পাবে।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে আমরা সাত বছর অতিক্রম করছি। গত দুই বছর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে এসডিজি বাস্তবায়নের গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। তবে আমরা আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি, এবং যাবো। অর্জনও করতে পারবো বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ হতে সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান ও যথাযথ নীতি অনুসরণের কারণে করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। নির্দিষ্ট সময়ে এসডিজি’র পথ পরিক্রমা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করি সঠিক ও উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা এবং কার্যকর পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি ) এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন-২০২২ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি, এ সম্মেলনের মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং বাস্তবায়ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের পন্থা খুঁজে বের করতে সমর্থ হবে। আমাদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ, এনজিও এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গও সমানভাবে অংশীদার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ সালের আগেই নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালের আগে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সমর্থ হবো।