পি কে কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে
হাজার হাজার কোটি রুপি আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যেই ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) -এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পি.কে হালদার)। বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন শাখার তরফে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে পি.কে হালদারসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে ইডির কর্মকর্তারা।
গত ১৪ মে পি.কে হালদারের গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিন কেটে গেছে, ইতিমধ্যেই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে ইডির আইনজীবী। এমনকি উদ্ধার করা হয়েছে ১৫০ কোটির বেশি ভারতীয় রুপি।
পি.কে হালদারের এই বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তারের পিছনে আর কোন কোন সহযোগী বা রাঘববোয়ালের হাত রয়েছে ইডি তারও একটা ইঙ্গিত পেয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আর সেই সূত্র ধরেই চলছে নতুন করে তল্লাশি অভিযান। কখনও পি.কে হালদারকে একা বসিয়ে, আবার কখনও আবার দুইজন বা সকলকে একত্রে বসিয়ে ক্রস চেক করে নিতে চাইছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
আসলে তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবারই পি.কে হালদার, তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মৈত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার ও আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদারকে কলকাতার স্পেশাল (সিবিআই) আদালত-১ তোলা হলে পাঁচ পুরুষ অভিযুক্তকে ১০ দিনের রিমান্ডের নির্দেশ দেয়। অন্যদিকে অভিযুক্ত এক নারীকে ১০ দিনের জেল হেফাজত দেওয়া হয়।
তদন্তে গতি আনতে পাঁচজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন, এই আবেদন জানিয়ে তাদের নতুন করে রিমান্ডে নিয়েছে ইডি। তাদের রাখা হয়েছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির আঞ্চলিক কার্যালয়ে। স্বভাবিকভাবেই নতুন নতুন তথ্যের সন্ধানে সকলকেই জেরার পর জেরা চলছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। তবে তাদের মূল লক্ষ্য পি.কে হালদার।
এমনকি তদন্তের স্বার্থে গণমাধ্যমের কর্মীদের এড়াতে অভিযুক্তদের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বিধাননগর মহকুমার হাসপাতালে নিয়ে মেডিকেল চেক আপের বদলে প্রতি ৪৮ ঘন্টা অন্তর একজন মেডিকেল অফিসার সিজিও কমপ্লেক্সে আসবেন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে। সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার ফের তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হতে পারে।
গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরসহ প্রায় ১১ টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে টিম-পি.কে হালদারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জেরায় ইডির কর্মকর্তারা জানতে পেরেছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে সে ভারতে প্রবেশ করে। ভারতে এসে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরেই আসল নাম বদল করে শিবশঙ্কর হালদার নাম পরিচয় দিয়ে থাকতে শুরু করে পি.কে এবং এদেশেই রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড বানিয়েছিল সে।
ইডি এও জেনেছে, বাংলাদেশ, ভারত, ও গ্রেনেডার-এই তিনটি দেশের পাসপোর্টের অধিকারী তিনি। ইডির আইনজীবীও জানান একাধিক দেশের পাসপোর্ট ও সেইসব দেশের নাগরিকত্বের নথি পাওয়া গেছে পি.কে হালদারের কাছ থেকে। যদিও কোনো একটি মহলের দাবি, তার কাছ থেকে কানাডার পাসপোর্টও পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার সতর্কতা জারিও করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই সতর্কতা জারির মধ্যেও কিভাবে পি.কে হালদার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করলো? সাধারণত বাংলাদেশ সহ বিদেশ থেকে ভারতে আসা কোনো ব্যক্তিকে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট দেখানোর পর পাসপোর্ট স্ক্যানিং করার পর সেই ব্যক্তির বায়োমেট্রিক (চোখের মণির ছবি, আঙুলের ছাপ) করা হয়।
সেক্ষেত্রে পি.কে হালদার তার আসল নাম বদল করে শিবশঙ্কর হলেও সীমান্ত পেরোনোর সময়ই বায়োমেট্রিক করার সময় ওই ব্যক্তির আসল পরিচয় সামনে আসার কথা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন- আগাম এই আশঙ্কার আঁচ করতে পেরেই কোনো একটি প্রভাবশালীর মদদে তিনি ইন্টারপোলের রেড কর্নার সতর্কতা জারি হওয়ার আগেই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং ভারতে ফিরে অশোকনগরে শিবশঙ্কর নামের আড়ালে বসবাস শুরু করেন।
আর সেখানেও পি.কে হালদারের মাথার ওপর ছিল প্রভাবশালীদের হাত। কোনো একটি মহল বলছে ভারত থেকেই ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে হয়তো তিনি কানাডায় যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে শিবশঙ্কর নামেই তিনি কানাডায় গিয়ে থাকতে পারেন।
এদিকে দফায় দফায় জেরায় ইডির কর্মকর্তারা অতিরিক্ত বেশ কিছু নাম পেয়েছেন। আর সেই সূত্র ধরেই ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা সেইসব জায়গায় গোপনে অভিযান চালাচ্ছেন। সেখান থেকে নথি ও ছবি সংগ্রহ করে তার ফের পি.কে হালদার সহ অন্যদের বয়ানের সাথে মিলিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে ইডির নজরে রয়েছে আরও কয়েকজন ব্যক্তি।