আল্লাহর ভালোবাসা লাভের ৫ নিদর্শন
মহান স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি মানুষের ভালোবাসা স্বভাবজাত ও প্রাকৃতিক। মানুষের অন্তরাত্মায় স্রষ্টার প্রতি যে অনুরাগ আছে তা সবচেয়ে প্রবল থাকে মুমিন তথা বিশ্বাসী মানুষের ভেতর। তারাই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে এবং ভালোবাসার স্বাদ উপলব্ধি করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় তারা সুদৃঢ়।
’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৫)
ঈমানের সঙ্গে সম্পর্ক : আল্লাহর প্রতি মুমিনের ভালোবাসা তার ঈমানের দাবি। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া মুমিনের ঈমান পূর্ণতা লাভ করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হবে। … (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৪১)
সব কিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর ভালোবাসা : মুমিনের জীবনে আল্লাহর ভালোবাসাই সব কিছুর ঊর্ধ্বে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাসো, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৪)
মুমিন-জীবনের প্রশান্তি : আল্লাহর ভালোবাসায় মুমিন-জীবনের প্রশান্তি নিহিত। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে লেখেন, ‘আল্লাহর ভালোবাসায় অন্তরের শক্তি, আত্মার খোরাক ও চোখের প্রশান্তি। সেটা এমন জীবনীশক্তি, যা থেকে যে বঞ্চিত হয় সে যেন প্রকৃতার্থেই মৃত, এমন আলো যে তা হারিয়ে ফেলে সে যেন সমুদ্রের গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত, এমন আরোগ্য যে তা হারিয়ে ফেলে তার অন্তরে বাসা বাঁধে সব ব্যাধি, এমন স্বাদ সে তা আস্বাদন করেনি তার জীবন ব্যথায় পরিপূর্ণ। আল্লাহর ভালোবাসাই ঈমান ও আমলের প্রাণসত্তা। ’ (মাদারিজুস সালিকিন : ৩/৮)
আল্লাহর ভালোবাসা লাভের নিদর্শন : কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ভালোবাসা লাভের কিছু নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে। যেমন—
১. ঈমানের সৌভাগ্য লাভ : ঈমান আল্লাহর ভালোবাসা লাভের অন্যতম নিদর্শন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন না উভয়কেই দুনিয়া দান করেন। কিন্তু ঈমান কেবল তাকেই দান করেন, যাকে তিনি ভালোবাসেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকেই তিনি ঈমান দান করেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৪৫৪৫)
২. রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য : মহানবী (সা.)-এর আনুগত্য আল্লাহর ভালোবাসা লাভের নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
৩. আল্লাহর ভালোবাসার নিদর্শন : আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে পার্থিব মোহ থেকে রক্ষা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তাকে দুনিয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন তোমাদের কেউ তার রোগীকে পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৬)
৪. বিনম্র আচরণের অধিকারী হওয়া : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা অন্যদের প্রতি বিনম্র আচরণের অধিকারী হয়ে থাকে। নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে বিনয় ও নম্র আচরণ পছন্দ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৬৫)
৫. ধৈর্যের পরীক্ষা : আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের দ্বিন ও দুনিয়ার ব্যাপারে পরীক্ষা করেন। মহানবী (সা.) বলেন, বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদের (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)
ভালোবাসা লাভের প্রত্যাশা : মুমিন আল্লাহকে ভালোবাসে যেন সে আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দাউদ (আ.)-এর দোয়াগুলোর একটি হলো এই যে, তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা এবং যে তোমাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা প্রার্থনা করি এবং এমন আমল করার সামর্থ্য চাই, যা তোমার ভালোবাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। হে আল্লাহ! তোমার ভালোবাসাকে আমার নিজের জান-মাল, পরিবার-পরিজন ও ঠাণ্ডা পানির চেয়েও বেশি প্রিয় করে দাও। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৯০)
আল্লাহর ভালোবাসার পুরস্কার : যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য ও মুক্তি দান করেন, পরকালে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৩৪৬৭)
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা