কেমন হবে পরকালের দাঁড়িপাল্লা মিজান
পরকালে আল্লাহ বান্দার আমলের পরীক্ষা নেবেন। আর পরীক্ষা করবেন এক বিশেষ দাঁড়িপাল্লার মাধ্যমে। কোরআনে যাকে ‘মিজান’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিচয় : মিজান অর্থ পরিমাপক বা দাঁড়িপাল্লা।
এমন পরিমাপক যার দুটি পাল্লা রয়েছে। পরিভাষায় পরকালে বান্দার ভালো-মন্দ কাজের পরিমাপ করার জন্য যে দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে তাকে মিজান বলা হয়।
কোরআনের বর্ণনায় মিজান : পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মিজান শব্দের উল্লেখ আছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘এবং কিয়ামতের দিন আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ডগুলো। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৭)#
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮)
হাদিসের বর্ণনায় মিজান : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুটি বাক্য এমন যা জিহ্বায় অতি হালকা, মিজানে ভারী, আর দয়াময় আল্লাহর কাছে খুব পছন্দনীয়; তা হচ্ছে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম’। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৬৮২)
যা কিছু ওজন করা হবে : কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুসারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ওজন করা হবে—
১. আমল : কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত মিজানে বান্দার আমল ওজন করা হবে। যেমন এই হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, আলহামদুলিল্লাহ মিজানকে পরিপূর্ণ করে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৭)
২. আমলকারী : আমলকারীকে পরিমাপ করার বর্ণনাও পাওয়া যায়। নবী করিম (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয় তাঁর পদদ্বয় মিজানে উহুদ পাহাড় অপেক্ষা ভারী হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯২০)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, কিয়ামতের দিন খুব মোটাতাজা বিশালাকার এক ব্যক্তি এমনভাবে উপস্থিত হবে যে আল্লাহ তাআলার কাছে তার ওজন একটি মশার পাখার সমানও হবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৭২৯)#
৩. আমলনামা : মিজানে ‘আমলনামা’ ওজন করা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, অতঃপর সেসব দপ্তরগুলো পাল্লার এক পালিতে এবং এই কাগজের টুকরা আরেক পালিতে ওঠানো হবে। তখন দপ্তরগুলোর পালি হালকা হয়ে ওপরে উঠে যাবে এবং কাগজের টুকরার পালি ভারী হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকবে। মোটকথা আল্লাহর নামের সঙ্গে অন্য কোনো জিনিস ভারী হতে পারবে না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৩৯)
দাঁড়িপাল্লা হবে একাধিক : কোরআন ও হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় দাঁড়িপাল্লা একাধিক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং কিয়ামতের দিন আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ডগুলো। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৭)
ওজন কখন করা হবে : ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘হিসাব শেষে আমলের ওজন করা হবে। কেননা ওজন দেওয়া হবে প্রতিদানের জন্য। হিসাব-নিকাশের পর তা হওয়া কাম্য। বস্তুত হিসাব হলো আমলের রিপোর্ট আর ওজন হলো তা পরিমাপে প্রকাশ করা। যেন প্রতিদান সেই হিসাবে নির্ধারিত হয়। ’ (কুরবু কিয়ামুস সাআহ, ১/৩১)
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা