রাজশাহীতে খুনের ঘটনার আসামী ও জিল্লুর ভান্ডারী হত্যা মামলার পলাতক তোতা মিয়া’কে গ্রেফতার
গত ০১ আগস্ট ২০২২ তারিখে রাজশাহীতে ঘরে অন্তসত্বা মেয়ে থাকায় প্রতিবেশীকে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করায় নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় এজাহারনামীয় প্রধান ০৩ আসামী ছেলে, মা এবং বাবাকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকা হতে আটক করেছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম।
গত ০১ আগস্ট ২০২২ তারিখ রাত ৯ঘটিকায় রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার হরিষার ডাইং এলাকার জনৈক নাহিদ তার বাড়িতে উচ্চ শব্দে গান শুনছিলেন। তাদের প্রতিবেশী মুকুল আলীর (৪৫) মেয়ে অন্তসত্বা হওয়ায় মুকুল আলী নাহিদকে উচ্চ শব্দে গান বাজাতে নিষেধ করেন। নাহিদ তাৎক্ষণিক বক্সের শব্দ কমিয়ে দিলেও মুকুল আলী সেখান থেকে চলে আসলে আবারও শব্দ বাড়িয়ে দেন। মুকুল আলী পুনরায় নাহিদের বাড়িতে গিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজাতে নিষেধ করলে নাহিদ, তার বাবা বকুল আলী, মা ও তার বোন মিলে মুকুলকে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে নাহিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা লোহার রড দিয়ে মুকুলের মাথায় আঘাত করে। এছাড়া চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। মুকুলের চিৎকার শুনে তার ছোট ছেলে শাহীন আলম ও জামাই আলমগীর সেখানে গেলে তাদেরকেও মারধর ও চাকু দিয়ে আঘাত করে জখম করে।
পরবর্তীতে স্থানীয়রা মুকুলকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে আসামীরা পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত মুকুলকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত ভিকটিমের ছেলে মোঃ শামীম ইসলাম বাদী হয়ে রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানায় ০৮ জন নামীয় এবং ৩/৪ জন’কে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-০৫ তাং-০২/০৮/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০২/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০।
মামলাটি রুজু হওয়ার পর উক্ত মামলার এজাহারনামীয় ৪,৫,৬,৭ এবং ০৮নং আসামীদেরকে রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।কিন্ত উক্ত মামলার ০১, ০২ এবং ০৩ নং আসামী গ্রেফতার এড়াতে রাজশাহী হতে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে জানতে পারে যে, উল্লেখিত হত্যা কান্ডের এজাহারনামীয় ০১, ০২ এবং ০৩ নং আসামী নাহিদ, বকুল আলী এবং মোছাঃ আমেনা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন মাদাম বিবিরহাট এবং উত্তর সলিমপুর এলাকায় অবস্থান করছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৩ আগস্ট ২০২২ইং তারিখ আনুমানিক ৫ ঘটিকায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। মোঃ নাহিদ হোসেন (২০), পিতা-মোঃ বকুল আলী, ২। মোঃ বকুল আলী (৪৫), পিতা- আছের উদ্দিন এবং ৩। মোছাঃ আমেনা (৪০), স্বামী-মোঃ বকুল আলী সর্ব সাং-হরিষার ডাইং, থানা- শাহমখদুম, রাজশাহী মহানগরীদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীরা উল্লেখিত হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী এবং এজাহার নামীয় প্রধান আসামী বলে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জিল্লুর ভান্ডারী হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী তোতা মিয়া’কে দীর্ঘ সাত বছর পর গ্রেফতার
চট্টগ্রাম জেলার রাংগুনিয়ার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জিল্লুর ভান্ডারী হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী তোতা মিয়া’কে দীর্ঘ সাত বছর পলাতক থাকার পরে ঢাকা মহানগরীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া এলাকা থেকে আটক করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
গত ২১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জিল্লুর ভান্ডারীকে রাংগুনিয়া উপজেলার রানীরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় গেটের সামনে কতিপয় দুস্কৃতিকারী গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন বাদী হয়ে ০৮ জন নামীয় ও ৪/৫ অজ্ঞাতনামা করে চট্টগ্রাম জেলার রাংগুনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে, যার নং- ০৮(১)১৫, ধারা-৩০২/৩৪ দঃ বিঃ, দায়রা মামলা নং-২১৬৪/১৭ এবং জিআর নং-০৮/১৫, ধারা-৩০২/৩৪ দঃ বিঃ। উক্ত মামলায় গত ১৫ ফেব্রæয়ারি ২০২২ইং তারিখ ২৩ জন সাক্ষীর সমস্ত সাক্ষ্য প্রমানের উপর ভিত্তিতে মহামান্য আদালত অভিযুক্ত দুই আসামীকে মৃত্যুদন্ড এবং ছয় আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে।
এই মামলার রায় হওয়ার পর থেকেই র্যাব-৭, চট্টগ্রাম পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করার লক্ষ্যে ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে, চট্টগ্রাম জেলার রাংগুনিয়ার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জিল্লুর ভান্ডারী হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী তোতা মিয়া ঢাকা মহানগরীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল অদ্য ১৪ আগস্ট ২০২২ইং তারিখ আনুমানিক ০৪১৫ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ তোতা মিয়া, পিতা-আবু সালেহ ওরফে বইল্যা, সাং-বাইশ্যার ডেবা, থানা- রাংগুনিয়া, জেলা-চট্টগ্রাম’কে আটক করে। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামী অকপটে স্বীকার যে, সে উপরে উল্লেখিত জিল্লুর ভান্ডারী হত্যা মামলার বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক রায়ের যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ধৃত আসামী তোতা মিয়া পেশায় একজন চাঁন্দের গাড়ীর ড্রাইভার। সে উল্লেখিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক পূর্বে একবার গ্রেফতার হয়ে জেলহাজত থেকে জামিনে মুক্তি নেয়। জামিনে মুক্তি নিয়ে সে স¦পরিবারে ঢাকা মহানগরীর উত্তরার ১০নং সেক্টর এলাকায় আত্মগোপন করে এবং পরিবার ও আত্মীয় স¦জনের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। পালিয়ে থাকাকালীন সময়ে আসামী তোতা মিয়া প্রথমে অটো রিক্সা চালায়। অটো রিক্সা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিষিদ্ধ করায় পরবর্তীতে সে সিএনজি ড্রাইভার হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করে এবং স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস শুরু করে এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ সাত বছর ড্রাইভারের ছদ্মবেশে পালিয়ে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার রাংগুনিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।