বঙ্গোপসাগরে ১৬ টি নৌকা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ১২ জন কে গ্রেফতার
গভীর সমুদ্রে এবং বাঁশখালীতে ৪৮ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষে সাম্প্রতিক কালে বঙ্গোপসাগরে ১৬ টি জেলে নৌকা ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত ১২ জন জলদস্যুকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম। বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র সহ দেশীয় অস্ত্র, তিন হাজার পিসের অধিক ডাকাতিককৃত ইলিশ মাছ, বিপুল পরিমাণ মাছ ধরার জাল ও ডাকাতের কাজে ব্যবহৃত নৌকা জব্দ।
“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত বঙ্গোপসাগরকে নিরাপদ ও জলদস্যু মুক্ত করার জন্য র্যাব-৭, চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিরলসভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম ভুমিকাপালনকারী মাৎস শিকারী জেলে ভাইদের মাছ ধরার কাজটি নির্বিঘেœ পরিচালনা করার জন্য জলদস্যূর বিরুদ্ধে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম সর্বদাই সোচ্চার। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগরে একটি জলদস্যূ বাহিনি সক্রিয় হয়ে নতূন করে দস্যুতা আরম্ভ করেছে এমন অভিযোগ আসছিল।
এরই মধ্যে গত ২৭ আগষ্ট চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্ত সাগর এলাকায় ৯টি মাছ ধরার বোটে ডাকাতি সংঘটিত হলে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে গ্রহন করে তদন্ত শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিশেষ সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, জলদস্যু বহনকারী ১টি বোট কর্তৃক সাগরে বিভিন্ন বোটে ডাকাতি করা হচ্ছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেঃ কর্ণেল এম এ ইউসুফ, পিএসসি, অধিনায়ক, র্যাব-৭, চট্টগ্রাম মহোদয়ের নেতৃত্বে ২টি চৌকষ আভিযানিক দল ও র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি আভিযানিক দলের সমন্বয়ে গভীর সমুদ্রে গত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ১৪০০ ঘটিকা হতে অদ্য ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ১৪০০ ঘটিকা পর্যন্ত সর্বমোট দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টার রুদ্ধাশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে করে দস্যুতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ১২ জন জলদস্যুকে আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃত আসামীরা হলোঃ ১। আনোয়ার (মালিকের ছেলে, মূলহোতা), পিতা- আনসার মেম্বার, ২। লিয়াকত (মাঝি), পিতা- কবির আহমেদ, ৩। মনির, পিতা- মোঃ আবদুল কাদের, ৪। আবুল খায়ের (ইঞ্জিন ড্রাইভার), পিতা- মৃত জয়নাল আবেদীন, ৫। নবীর হোসেন, পিতা- মৃত আব্বাছ, ৬। নেজামউদ্দিন, পিতা- মৃত মুক্তার আহমেদ, ৭। হুমায়ুন, পিতা- আব্দুল কাদের, ৮। সাহেদ, পিতা- হাজী আবুল হাসান, ৯। সাদ্দাম, পিতা- আবু তাহের, ১০। আতিক, পিতা- মো ইব্রাহিম, ১১। এমরান, পিতা- মোঃ জহির এবং ১২। আমানউল্লাহ, পিতা- মৃত ইসলাম মিয়া বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। পরবর্তীতে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ তারা সমূদ্রে বিভিন্ন বোটে ডাকাতি করেছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং তাদের হেফাজত থেকে ০১টি বোট, আনুমানিক ৩,০০০ পিস ইলিশ মাছ, মাছ ধরার রড় জাল, ০৩টি ওয়ান শুটারগান, ০১টি চাইনিজ কুড়াল, ১৬টি দা ও ছুরি, ০১টি বাইনোকুলার, ০৪টি টর্চ লাইট, ০২টি চার্জ লাইট, ০২টি হ্যান্ড মাইক, ৭০ টি মোবাইল, নগদ ৫,৭০০ টাকা উদ্ধারসহ আসামীদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ জানা যায়, পূর্বে তারা বোট নিয়ে সাগরে গিয়ে অল্প পরিমান মাছ পায় ফলে বোটের মালিক আনছার মেম্বার বোটের সদস্যদের কোন টাকা-পয়সা না দিয়ে তাদের আদেশ প্রদান করে যে, মাছ ধরতে না পারলে ডাকাতি করে মাছ নিয়ে আসতে হবে। আনছার মেম্বার ও তার দলের মূল্য উদ্দেশ্য ছিল অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভ করা। এর জন্যই নিজের সন্তানকে ডাকাত সর্দার বানিয়ে বোট ডাকাতি করার জন্য সাগরে প্রেরন করে। এছাড়াও আটককৃত আসামীদের নিজ মূখে স্বীকারোক্তি মতে, তারা পূর্বের ৯টি এবং বর্তমানে ৭টিসহ সর্বমোট ১৬টি বোট ডাকাতি করেছে বলে জানায়।
উল্লেখ্য, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত ০১নং আসামী আনোয়ার (আনছার মেম্বারের ছেলে, মূলহোতা) এর নামে ০৩ টিসহ প্রত্যেকেরই বিরুদ্ধেই চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় জলদস্যূতা, সস্ত্রাসী, ডাকাতি, দুর্ধষ চাঁদাবাজী, হত্যাচেষ্টা এবং অপহরণকারী সংক্রান্তে একাধিক মামলা রয়েছে
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।