কোতোয়ালী থানায় পরিবর্তনের ছোঁয়া

0 213

প্রবাদে আছে, ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ।’ কিন্তু চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালী থানার অনন্য পুলিশিং বদলে দিয়েছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা। পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এই থানায়। পূর্বের ওসি মোহাম্মদ মহসিনের সময় থেকেই একটু একটু করে পাল্টে গেছে কোতোয়ালী থানা। তার আমলে প্রথমবারের মতো দেশের কোনো থানায় সেবা ছাউনি, দেয়াল চিত্র, বিভিন্ন মনীষীর বাণী সম্বলিত চিত্রপট, অফিসার্স কর্নার ইত্যাদি দেখতে সাধারণের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ওসি মো. জাহিদুল কবীর কোতোয়ালী থানায় যোগ দিয়ে অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা আনয়নে মনোযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের চাকরি স্থায়ী নয়। আজ এখানে তো কাল অন্যত্র। তাই বলে যে থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করব, সে থানাকে কীভাবে আরো বেশি জনবান্ধব করা যায়, স্বচ্ছতা আনা যায়, সেবাপ্রার্থী থানায় এসে যেন পুলিশের ওপর আস্থা না হারান, থানার পুলিশ সদস্যরা কে কী করছে, তার সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান করতে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা করছি।

ওসি কোতোয়ালী বলেন, সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড বেগবান করতে আমরা বদ্ধপরিকর। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মকাণ্ড কঠোর। তবে থানায় আসা মানুষের দিকে আমরা সেভাবে মনোযোগ দিতে পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার মূল থানাগুলোতে সঠিক পরিবেশ নেই। পুলিশ জনগণের বন্ধু-সেই কথাটার বাস্তব রূপ দিতে সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে কোতোয়ালী টিম কাজ করছে।

তিনি বলেন, থানায় ঢুকেই ডান দিকে করা হয়েছে সার্ভিস ডেলিভারি রুম। সেখানে একজন পুলিশ থাকবেন। সেবা প্রার্থীকে চা/কফি দিয়ে আপ্যায়ন করে জানতে চাইবেন থানায় আসার কারণ। জিডি বা মামলা করতে এলে অভিযোগ শুনবেন। তারপর তাকে ডিউটি অফিসারের রুমে নিয়ে যাবেন। আবার ওসি বা অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে এলে সেই কক্ষে নিয়ে যাবেন। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে এলে তার অভিযোগ গ্রহণ করে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে।

এ উদ্যোগটি ওসি জাহিদ পাঁচলাইশ থানায় দায়িত্ব পালনকালীন সেখানে করেছিলেন। একইভাবে কোতোয়ালীর দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দুই মাস ধরে একটু একটু করে পাল্টে দিচ্ছেন কোতোয়ালী থানাকেও।

ওসি জাহিদুল কবীর বলেন, সদ্য বদলি হওয়া সিএমপি কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীরের আগ্রহে এবং বর্তমান কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় স্যারের দিকনির্দেশনায় ইউরোপের পুলিশ স্টেশনের ধাঁচে সাজানো হচ্ছে কোতোয়ালী থানাকে। একই সাথে সেবার মান বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, বিভিন্ন দেশের পুলিশিং কার্যক্রমের মতো আরো জনবান্ধব করতে সিএমপিতে নেওয়া হয়েছে অভিনব উদ্যোগ। এ উদ্যোগের পাইলট প্রকল্প হিসেবে পাঁচলাইশ থানাকে সাজানো হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার পুলিশ স্টেশনের ধাঁচে। একইভাবে কোতোয়ালী থানাকে সাজানো হচ্ছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষ থেকে শুরু করে প্রতিটি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে স্বচ্ছ কাচ দিয়ে। প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটার সম্বলিত আলাদা ডেস্ক। আসামিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিজ্ঞানসম্মত হাজতখানা। তৈরি করা হয়েছে লাইব্রেরি, নারী ও শিশু ডেস্ক, প্রতিবন্ধী ডেস্ক।

হাজতখানা বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষ। ভেতরে আটকা অপরাধী। তবে কোতোয়ালী থানার হাজতখানার চিত্র পাল্টে দেবে মানুষের ধারণা। হাজতখানার পাশে সুসজ্জিত লাইব্রেরি পুরো পরিবেশে এনেছে ভিন্ন আবহ। এখানে পড়ার জন্য রয়েছে শত শত বই। পড়তে পারেন পুলিশ, আসামি, সেবাপ্রার্থী সবাই।

চলমান উদ্যোগের প্রশংসা করে কোতোয়ালী থানার প্রাক্তন ওসি (বর্তমানে ঢাকা উত্তরা-পশ্চিম থানার ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, এটাই হওয়া উচিত। আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। যতটুকু পেরেছি করেছি। এখন বর্তমান ওসি বাকিটুকু করছেন। এটা শুভ লক্ষণ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.