ভালো থাকতে সহায়ক ইসলামী নির্দেশনা
অনলাইন ডেস্ক:
সুন্দর পৃথিবীতে যত দিন মহান আল্লাহ হায়াত দিয়েছেন—তাতে সবাই ভালো থাকতে চায়। জীবনে কষ্ট-দুঃখ, হতাশা-বেদনা, রোগ-শোক আসতেই পারে এবং আসবেও। তার পরও ভালো থাকা সম্ভব, মনকে ভালো রাখা সম্ভব। সে জন্য প্রয়োজন মহান আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া, তাঁকে স্মরণ করা, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা।
নিজের মধ্যে ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত করা। এ বিষয়ের আলোচনা নিম্নরূপ—
আল্লাহর স্মরণ : মহান আল্লাহর স্মরণ মানুষের অন্তরের কঠোরতা দূর করে তাতে কোমলতা ও সজীবতা সৃষ্টি করে।
হৃদয়ের বিক্ষুব্ধতা দূর করে তাতে প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দেয়। মানুষ মন ভালো করার জন্য অনেক কিছুই করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেগুলো মনকে ভালো করতে পারে না। মন ভালো করার অনন্য উপকরণ হলো, আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ নিয়ে চিন্তা করা, নামাজ, তিলাওয়াত, দোয়া ও নিয়মিত তাসবিহ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়; জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়; যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, পরম আনন্দ এবং শুভ পরিণাম তাদেরই। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮-২৯)
অল্পে তুষ্টি থাকা : অল্পে তুষ্টি মানে—আল্লাহ তাআলা যা দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা। হারাম বর্জন করে হালাল জিনিসে পরিতৃপ্ত থাকা এবং অভিযোগ ও রাগ পরিহার করে অন্তরকে সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দেওয়া। যা পেলাম বা যত দূর হয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর শোকর। এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। একজন মুমিনের মধ্যে এই গুণটা থাকা খুবই দরকার। এমনটা হলে হতাশা থাকবে না। সম্পদ ও সম্মান অর্জনের অশুভ প্রতিযোগিতা থাকবে না। স্বস্তি ফিরে আসবে। মন ভালো হবে। এই গুণ অর্জন করতে পারলে শত কষ্টেও অপূর্ণতার কোনো আক্ষেপ থাকবে না। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে ব্যক্তিই সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাকে প্রয়োজন মাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট রেখেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ১০৫৪)
নিচের দিকে তাকানো : জাগতিক বিষয়ে নিজের চেয়ে তুলনামূলকভাবে যার অবস্থা নিম্নমানের তার দিকে তাকালে মনে প্রশান্তি আসে। মনে হয়—আল্লাহ আমাকে খুব ভালো রেখেছেন। তখন মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা সহজ হয়। মনের গভীর থেকে শুকরিয়া বের হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের প্রতি তাকাও। এমন ব্যক্তির দিকে তাকিয়ো না, যে তোমাদের চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের। তাহলে এ পন্থা অবলম্বনই হবে আল্লাহর নিয়ামতকে অবজ্ঞা না করার এক উপযোগী মাধ্যম। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৬৩)
নামাজ আদায় : নিয়মিত নামাজ আদায় মনকে প্রফুল্লতায় ভরে দেয়। বিশেষ করে ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করলে ভোরের স্নিগ্ধতায় মন ভালো হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তার সারা দিনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গিঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গিঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে—‘তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। ’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তাহলে তার আর একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সব গিঁট খুলে যায়। আর তার সকাল হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। অন্যথায় সে সকালে ওঠে কলুষিত মন ও অলসতা নিয়ে। ’ (বুখারি, হাদিস : ১১৪২; মুসলিম, হাদিস : ৭৭৬)
পাপ থেকে বেঁচে থাকা : মানুষ পাপ করে মনের আনন্দ পাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রকৃত আনন্দ ও টেকসই প্রশান্তি পাপ ছেড়ে দেওয়ার মধ্যেই নিহিত আছে। যেমন—বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণে তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত ও অবাধ মেলামেশা সাময়িক আনন্দ দেয় বটে; কিন্তু প্রকৃত আনন্দ ও টেকসই প্রশান্তি পাপ থেকে বেঁচে সংযত জীবন-যাপনের মধ্যেই পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘দৃষ্টি হচ্ছে ইবলিসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্য থেকে একটি তীর, যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে তা ত্যাগ করবে আমি তার বদলে তাকে এমন ঈমান দান করব, যার মিষ্টি সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করবে। ’ (তাবারানি, হাদিস : ১০৩৬২)
তাকদিরে বিশ্বাস : তাকদিরে বিশ্বাস মানুষের মন-মননকে ভালো রাখতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কারণ তাকদির বা ভাগ্য নির্ধারিত যা পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা সব সৃষ্টির তাকদির আসমান-জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগেই লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন, যখন আল্লাহর আরশ পানির ওপর ছিল। (মুসলিম, হাদিস : ৬৯১৯)
তাকদির নির্ধারিত হলেও আমলের প্রয়োজন আছে। কারণ ভালো কাজ করতে পারাটাই ভাগ্য ভালো হওয়ার লক্ষণ। যার ভাগ্যে যেমন আছে তেমন কাজই তার জন্য সহজ করে দেওয়া হয়। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাহলে আমরা কি আমাদের লিখিত তাকদিরের ওপর ভরসা করে সব আমল ছেড়ে দেব? নবী (সা.) বললেন, না; বরং আমল করতে থাকো। কারণ প্রত্যেকের জন্য তা-ই সহজ করে দেওয়া হয়, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব যে পুণ্যবান তার জন্য নেক কাজ করা সহজ হয়। আর যে হতভাগা তার জন্য পাপের কাজ করা সহজ হয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়াত পাঠ করলেন। যার অর্থ যে ব্যক্তি দান করে, পাপের কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ভালো কর্মের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে, তার জন্য আমি জান্নাতের কাজ সহজতর করে দিই। (বুখারি, হাদিস : ৪৬৬৬)
পরিশেষে বলা যায়—আল্লাহর রহমত, ভালোবাসা ও অনুগ্রহ থেকে নৈরাশ না হয়ে তাঁর নির্দেশিত পথেই ভালো থাকার চেষ্টা করলে সফল হওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি
বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়