বৃক্ষরোপণে অফুরন্ত সওয়াব

0 327

অনলাইন ডেস্ক:

বৃক্ষরোপণ বাহ্যিকভাবে জাগতিক কাজ। কিন্তু উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৃক্ষরোপণ করলে এর মধ্যে সদকায়ে জারিয়া তথা অফুরন্ত সওয়াব অর্জন করা সম্ভব। কেননা বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে মানবজাতি ও প্রাণিকুলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধিত হয়। রাসুল (সা.) নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করেছেন এবং উম্মতকে বৃক্ষরোপণ করতে তাগিদ দিয়েছেন।

নিম্নে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো—

একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করতে হবে

কারো কাছে একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করার নির্দেশ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়ও এসে যায়, আর তোমাদের হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে বসা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর আগেই যেন সে তা রোপণ করে দেয়। ’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৩০০৪)

সদকার অনন্য মাধ্যম বৃক্ষরোপণ

বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সদকার নেকি অর্জিত হয়। যেমন হাদিসে এসেছে, আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি দামেস্কে বৃক্ষরোপণ করছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, আপনি এ কাজ করছেন, অথচ আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবি? তখন তিনি বলেন, আপনি ব্যতিব্যস্ত হবেন না। আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন বৃৃক্ষরোপণ করল, যা থেকে কোনো মানুষ বা আল্লাহর কোনো সৃষ্টিজীব ভক্ষণ করল, তাতে তার জন্য সদকা আছে। ’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২৭৫৪৬)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে বা ফসল চাষাবাদ করে, অতঃপর তা থেকে পাখি, মানুষ অথবা চতুষ্পদ প্রাণী কিছু খেয়ে নেয়, তাহলে তার জন্য সেটি সদকা হিসেবে গণ্য হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২০; মুসলিম, হাদিস : ১৫৫২)

রোপিত বৃক্ষের ফল চুরি হয়ে গেলেও তা সদকা

কারো গাছের ফল অন্য কেউ না বলে খেলেও সদকা হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপণ করে, অতঃপর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য সদকাস্বরূপ। যা কিছু চুরি হয়ে যায়, তা সদকা। হিংস্র পশু যা খেয়ে নেয়, তা সদকা। সেখান থেকে পাখি যা খায়, তা সদকা। আর কেউ ক্ষতিসাধন করলে সেটাও তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৫২)

বৃক্ষরোপণে সদকায়ে জারিয়া

বৃক্ষরোপণকে ‘সদকায়ে জারিয়া’ বা প্রবহমান দান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার কবরে সাতটি নেক আমলের সওয়াব জারি থাকে। (১) যে ব্যক্তি (উপকারী) জ্ঞান শিক্ষা দিল বা (২) খাল-নালা প্রবাহিত করল অথবা (৩) কূপ খনন করল বা (৪) ফলবান বৃক্ষ রোপণ করল অথবা (৫) মসজিদ নির্মাণ করল বা (৬) কোরআনের উত্তরাধিকারী বানাল অথবা (৭) এমন সুসন্তান রেখে গেল, যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। ’ (বায়হাকি শোআবুল ঈমান, হাদিস : ৩১৭৫; সহিহুত তারহিব, হাদিস : ৭৩)

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার উম্মে মাবাদের বাগানে প্রবেশ করেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মে মাবাদ! এ গাছ কে রোপণ করেছে? কোনো মুসলমান, নাকি কাফির? সে বলল, মুসলমান রোপণ করেছে। তখন তিনি বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে, আর তা থেকে মানুষ কিংবা চতুষ্পদ প্রাণী অথবা পাখি কিছু ভক্ষণ করে, তবে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তার জন্য তা সদকাস্বরূপ থাকবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৫২)

বিনা প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন নিষিদ্ধ

মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত হলো বৃক্ষ। বৃক্ষ প্রাণিকুলকে রোদের প্রচণ্ড উত্তাপ থেকে ছায়া দেয়। আমরা যত সুস্বাদু ফল-মূল ভক্ষণ করি, সবই বৃক্ষ থেকে আহরিত। মানবদেহের মারণব্যাধি অনেক রোগের ওষুধ এই বৃক্ষের নির্যাস থেকেই তৈরি হয়। তাই প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে কুল বৃক্ষ কর্তন করবে, আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৩৯)

বৃক্ষ নিধন আল্লাহর ক্রোধের কারণ

যারা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করবে, তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে ফিরে যায় (অথবা নেতৃত্বে আসীন হয়), তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্য ও প্রাণী বিনাশের চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৫)

সুতরাং আমরা যেন পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণী ধ্বংসের পাঁয়তারা করে আল্লাহর ক্রোধের শিকার না হই।

পরিশেষে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে বৃক্ষ এক অনন্য সৃষ্টি। এর আছে বহুমুখী গুরুত্ব ও তাৎপর্য। বৃক্ষরাজিসহ সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা তাতেই নিহিত আছে গোটা প্রাণিজগৎ, ভৌতজগৎ এবং তাদের মিথস্ক্রিয়া। এখানে মানুষ একটি উপাদান মাত্র এবং তার কল্যাণের জন্যই প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম অবশ্য প্রয়োজন। অন্যথায় মনুষ্য জাতি নিজেও একদিন বিপন্ন ও বিলুপ্ত হয়ে পড়বে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.