বিশ্বকাপ হার নিয়ে শুরু হয়েছে পাকিস্তান-ভারত বাকযুদ্ধ
অনলাইন ডেস্ক:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের হারের পর ভারতের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যেই নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে উদ্দেশ্য করে টিটকারিও দিয়েছেন।
ভারতের ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামি ম্যাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারের হৃদয় ভাঙ্গার ইমোজি দেয়া একটি টুইট-রিটুইট করে লিখেন, ‘সরি ব্রাদার। এটাকে বলে কার্মা।’ কার্মা অর্থ্যাৎ হচ্ছে কর্মের ফল।
সেমিফাইনালে ভারত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হেরে গিয়েছিল। এরপর শোয়েব আখতার টুইটারে লিখেছিলেন, ‘১৭০/০- এই ফিগার ভারতকে অনেকদিন ধরে বিক্ষুব্ধ করবে।’
শোয়েব আখতার টুইটারে ভিডিওতে বলেন, ‘ভারতের জন্য এটা একটা লজ্জাজনক হার।’ ম্যাচ চলার সময় টুইটারে এক্টিভ ছিলেন শোয়েব আখতার, ‘ভাইয়েরা একজনও আউট করবে না তোমরা?”
শোয়েব আখতারের এসব টুইট ভালোভাবে নেননি ভারতের অনেকেই। ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা এবং ক্রিকেটারদের কেউ কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। ঘটনা শেষ পর্যন্ত শামির টুইটে গড়ায় এবং এটা এখন টুইটারে ট্রেন্ডিং।
শামির টুইটের উত্তরে শোয়েব আখতার আবার ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলের একটি টুইট জুড়ে দেন, যেখানে হারশা ভোগলে পাকিস্তানের বোলারদের ‘বেস্ট বোলিং টিম’ আখ্যা দিয়ে লেখেন, ‘ক্রেডিট টু পাকিস্তান। খুব কম দলই ১৩৭ রান পুঁজি এভাবে ডিফেন্ড করতো যেটা পাকিস্তান করছে।’
শোয়েব আখতার হারশা ভোগলের টুইটটির ওপর লেখেন, ‘এটাকে বলে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন একটা টুইট।’
মোহাম্মদ শামি এখন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার এবং সাংবাদিকদের তোপের মুখে।
পাকিস্তানের ক্রিকেট সাংবাদিক ইহতিশাম উল হক টুইট করে মনে করিয়ে দিয়েছেন ২০২১ সালে যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে খারাপ খেলায় মোহাম্মদ শামি ভারতে তুমুলভাবে সমালোচিত হচ্ছিলেন, কেউ কেউ শামির মুসলিম পরিচয় নিয়েও কথা শুনিয়েছিল তখন।
ওই সময় পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ রিজওয়ান টুইটারে লিখেছিলেন, ‘যে চাপ, সংগ্রাম ও ত্যাগ একজন ক্রিকেটার তার দেশ ও মানুষের জন্য নেয় সেটা মাপা অসম্ভব। শামি এখন বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন। আপনারা নিজেদের তারকাদের সম্মান করুন। এই খেলা সবাইকে এক করার জন্য, আলাদা করতে নয়।’
পাকিস্তানের সাংবাদিক আরফা ফিরোজ জেকও এই কথাই বলছেন টুইটারে।
শামির টুইটার প্রোফাইল ট্যাগ করে তিনি লিখেন, ‘আমরা বুঝি পাকিস্তানের হারের পর আপনার মন্তব্যের কারণ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের পর আপনাকে ভারতের ক্রিকেট ভক্তরা ধিক্কার জানিয়েছিল, গালি দিয়েছিল। আমরা বুঝি আপনি এখন পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করছেন ‘
পাকিস্তানের এই সাংবাদিক আরেকটি টুইটে লিখেন, ‘ইরফান পাঠান, হরভজন সিং, গৌতম গম্ভীর ও ভিরেন্দর সেহওয়াগের মতো শামিও বিশ্বব্যাপী সম্মান হারানোর দলে যোগ দিয়েছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সস্তা ও অযৌক্তিক মন্তব্য করে।’
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার, অমিত মিশ্রা পাকিস্তানের সেমিফাইনাল জয়কে বলেছেন, ‘আপসেট’। টুইটারে ক্রিকেট নিয়ে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন অমিত মিশ্রাও।
অমিত মিশ্রা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পরে টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন যেখানে লেখা, ‘ক্রিকেটে মনযোগ দেও, এর মধ্যে ধর্ম এনো না।’
ফাইনাল শেষ হওয়ার সাথে সাথে একটি ভাঙ্গা গাড়ির ছবি পোস্ট করে অমিত মিশ্রা লিখেন, ‘এক্সিট।’
এর আগে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়ের পরে অমিত মিশ্রা সেটাকে ‘আপসেট’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে লেখেন, ‘বিশ্বকাপে আরো একটি আপসেট হলো। ওয়েল প্লেইড পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ডকে পরেরবারের জন্য শুভকামনা।’
এসব টুইটের নিচে ক্রিকেট অনুসারীদের কেউ কেউ ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুরেশ রাইনাকে উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল জয়ের পর সুরেশ রাইনা টুইটারে লিখেন, ‘দুর্দান্ত এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্সের জন্য অভিনন্দন পাকিস্তান দলকে।’
পাকিস্তানের ব্যাটিং মেন্টর ম্যাথু হেইডেনকে সেখানে ট্যাগ করে রাইনা লিখেন, ‘এই দলটার পেছনে সেরা একজন কোচ ও গুরু আছেন, যিনি নিজে দৃষ্টান্ত হিসেবে কখনো ব্যর্থ হননি।’
ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচ থেকেই শুরু হয়েছে দু’দলের সাবেক ক্রিকেটার ও সমর্থকদের এই লড়াই।
ইরফান পাঠান এর মধ্যে জড়ালেন যেভাবে
পাকিস্তানের গণমাধ্যম জিওনিউজের সাংবাদিক ফরিদ খান টুইটারে লিখেন, ‘মোহাম্মদ শামি ঠিক ইরফান পাঠানের মতো করেই তার মন ভেঙ্গেছেন।’
ইরফান পাঠান সেমিফাইনালে পাকিস্তানের জয়ের পর টুইট করে লিখেন, ‘প্রতিবেশী আসে যায়। কিন্তু সৌন্দর্য্য আপনি সবার মধ্যে পাবেন না।’
এখানেও শোয়েব আখতার মন্তব্য করেন, ‘আরে কী হয়েছে ভাই। কেউ কিছু বললে আমাকে বলো। আমি বকে দেবো, প্রমিজ।’
ইরফান পাঠানের এই টুইটের নিচে যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তা সুলেমান রাজা এমবিই লেখেন, ‘সত্যিই কঠিন সময় গেছে হয়তো আপনার। কিন্তু আপনার টুইটটা রুচিশীল হলো না। আপনি কিভাবে সরলীকরণ করেন। আপনি এর চেয়ে অনেক ভালো বলেই জানি। সাধারণ দর্শকের মতো ব্যবহার করবেন না।’
সোমবার সকালেই আবার ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন নিজের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেন, ‘গত সন্ধ্যায় ইংল্যান্ডকে ট্রফি তুলতে দেখলাম। আশা করছিলাম ভারত এটা পাবে।’
তবে অনেকে মনে করছেন এই টুইটার যুদ্ধে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফেরও ভূমিকা ছিল। তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ১০ উইকেটে হারের পর টুইটারে লিখেছিলেন, ‘রোববার বিনা উইকেটে ১৫২ বনাম বিনা উইকেটে ১৭০ রানের খেলা।’
প্রতিবেশী ভারতের ক্রিকেট দলকে খানিকটা টিটকারি দিয়েই তিনি এই টু্ইটটি করেছিলেন বৃহস্পতিবার। ২০২১ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান, এবারে একই ব্যবধানে হারালো ইংল্যান্ড।
এই টুইটের নিচে ইরফান পাঠান লেখেন, ‘আপনাদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য এটাই। আপনারা অন্যের দুঃখে শান্তি পান, আর আমরা নিজেদের খুশিতে খুশি হই।’
ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচ থেকেই শুরু হয়েছে দু’দলের সাবেক ক্রিকেটার ও সমর্থকদের এই লড়াই। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ভারতের ভিরাট কোহলি একটি ক্যাচ মিস করেন।
পাকিস্তানের সমর্থকদের কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, এটা ছিল একটা নাটক, যাতে পাকিস্তান সেমিফাইনাল না খেলতে পারে।
শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে যাওয়ায় পাকিস্তানের জন্য সেমিফাইনালে খেলা সহজ হয়।