নির্জনে একাকী আল্লাহর ইবাদত

0 205

অনলাইন ডেস্ক:

নির্জনতা, একাকী থাকা, এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। বিশেষত প্রাথমিক স্তরে। এ সময় আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে প্রার্থনা করার সুযোগ লাভ হয়

ওকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মুক্তির উপায় কী? তিনি বললেন, তুমি তোমার জিহ্বা সংযত রাখো, তোমার বাসস্থান যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয় (অর্থাৎ তুমি তোমার বাড়িতে অবস্থান করো) এবং তোমার গুনাহের জন্য ক্রন্দন করো। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪০৬)

ইবাদতের জন্য নির্জনতা কাম্য কি-না? তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ব্যক্তিভেদে কারো জন্য নির্জনতা কাম্য, আর কারো জন্য নির্জনতা কাম্য নয়। নিচে আমরা নির্জনতার কিছু উপকার তুলে ধরব।

ইবাদতের জন্য একাকিত্ব

নির্জনতা, একাকী থাকা, এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। বিশেষত প্রাথমিক স্তরে। এ সময় আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে প্রার্থনা করার সুযোগ লাভ হয়। মনের মাধুরী মিশিয়ে নির্জনে মহান প্রভুকে ডাকার সুযোগ হয়।  ওহি নাজিল হওয়ার পূর্বে প্রিয় নবী (সা.)-এর কাছে নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায়, যার কারণে তিনি ‘হেরা’ গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। নিজ পরিবারের কাছে ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এভাবে সেখানে তিনি এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩)

গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা

লোকালয়ে মানুষের সঙ্গে বসবাসের কারণে যেসব সচরাচর গুনাহ হয়ে থাকে, সেসব থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অন্যের গিবত করা। দুজনের আলাপচারিতার মাঝেই মানুষ গিবতে লিপ্ত হয়ে যায়। অনেক সময় গিবত না করলেও নিজের অনিচ্ছায় গিবতের শ্রোতা হওয়া লাগে। তখন ধীরে ধীরে গিবতের অপরাধবোধ লোপ পেতে থাকে। অথচ এই গিবত করার কারণে কবরে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। তা ছাড়া আপনি যখন মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করবেন, তখন তাদের মাঝে যেই মন্দ অভ্যাসগুলো আছে, সেগুলোও ক্রমান্বয়ে আপনার মধ্যে সংক্রমিত হতে থাকবে। ধীরে ধীরে পাপের প্রতি ঘৃণাবোধ চলে যাবে। এ জন্য আমাদের অনেক মনীষী নির্জনতা অবলম্বন করেছেন।

ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে  মুক্তির মাধ্যম

ঝগড়ার কারণে আমাদের আমলনামা পাপের বোঝায় ভারী হতে থাকে। সে জন্য নির্জনতায় এ ধরনের ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে খুব সহজেই বেঁচে থাকা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চারপাশে বসা ছিলাম। তখন তিনি ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তোমরা যখন দেখবে, মানুুষের ওয়াদা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের আমানতদারি কমে গেছে এবং তারা এরূপ হয়ে গেছে—এ বলে তিনি তাঁর হাতের আঙুল পরস্পরের মধ্যে মেলালেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে তাঁকে বললাম, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন! আমি তখন কী করব? তিনি বললেন, তুমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তোমার ঘরে অবস্থান করো, তোমার জিহ্বা সংযত রাখো, যা জানাশোনা আছে তাই গ্রহণ করো, এবং অজানাকে পরিত্যাগ করো। আর তোমাদের নিজের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক হও এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৪৩)

অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ

সাধারণ মানুুষের সঙ্গে যখন চলাফেরা করা হয়, তখন তারা নানাভাবে কষ্ট দিয়ে থাকে। মিথ্যা অপবাদ, মন্দ ধারণা, হিংসা-বিদ্বেষ—এ জাতীয় যত ঘৃণ্য কাজ আছে, এগুলোর মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে থাকে। যখন আমি নীরবে নির্জনে থাকব তখন সহজে এ ধরনের কষ্ট থেকে বাঁচতে পারব। অনেক সময় দেখা যায়, এসবের কারণে ধৈর্যধারণ না করতে পারলে, বিপরীতে অনেক বড় অপরাধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য এ ক্ষেত্রে নির্জনতাই শ্রেয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.