মুখেই লুকিয়ে থাকে যে সকল সমস্যা সমূহ
একজন ডাক্তার যখন তার রোগীর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলেন তা শুধু ডাক্তারের পেশার কারণে নয় বরং মানুষের মুখেই অনেক রোগের উপসর্গ লুকিয়ে থাকে। অনেক সময় মুখের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে মূল রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
বিভিন্ন ডাক্তারদের কাছে একদল গবেষক প্রশ্ন করেন যে, তারা আসলে একজন রোগীর মুখে কি দেখেন যখন তারা সেই রোগীর সঙ্গে কথা বলেন। বেশিরভাগ ডাক্তাররাই বলেন যে, শরীরের ভেতরে কোনো সমস্যা হলে তা সাধারণ অবস্থায় মুখে ধরা পড়ে। তাই মুখের হালকা পরিবর্তনও অবহেলা করা উচিত নয়।
আসুন জেনে নিই মুখের কোন কোন ছোট পরিবর্তনগুলো আমাদের কি সমস্যা নির্দেশ করে।
শুষ্ক ত্বক বা ঠোঁট
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অব মেডিসিন এবং ‘হোয়াট দ্য ইয়াক’ এর লেখিকা রোশিনি রাজ বলেন, শুষ্ক ত্বক এবং ঠোঁট নিঃসন্দেহে পানি শুন্যতার একটি লক্ষণ। এটি এর থেকেও বড় কিছু হতে পারে যেমন ঘাম নিতসারক গ্রন্থির কার্যক্রমে ব্যাঘাত অর্থাৎ হাইপোথেরডিজম (যা থাইরয়েড হরমোনের অপর্যাপ্ত মাত্রা কারণে হয়) অথবা ডায়াবেটিকস। হাইপোথেরডিজমের অন্য উপসর্গ হল ঠান্ডা অনুভব, ওজন বৃদ্ধি এবং ক্লান্তি। এবং ডায়াবেটিকসের অন্যান্য উপসর্গ হল খুবই তৃষ্ণা পাওয়া, বার বার মূত্রত্যাগ এবং চোখে ঝাপসা দেখা।
মুখে অতিরিক্ত লোম
অনাকাঙ্ক্ষিত লোম বিশেষ করে চোয়াল, চিবুক এবং ঠোঁটের ওপরে এটি পলিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের লক্ষণ হতে পারে। এটি ঘটে যখন একটি মেয়ের শরীরে মেয়েলি হরমোনের তুলনার পুরুষ হরমোন বেশি বিকশিত হয়।
চোখের পাতায় হলুদ দাগ
কোলেস্টেরল আক্রান্ত এ ধরনের রোগীদের বলা হয় জান্থালেস্মাতা, যা হার্টের রোগের উচ্চ ঝুঁকি নির্দেশ করে। ২০১১ সালে করা প্রায় ১৩০০ রোগীর ওপর ডেনিশের একটি গবেষণায় থেকে বলা হয়, এমন ৪ শতাংশ রোগী রয়েছে যাদের চোখের পাতায় হলদে দাগ আছে এবং তাদের শরীরের ৭০ শতাংশে ধমনীর বিকাশ পৌঁছায় না অর্থাৎ তারা অন্যান্য ৫০ শতাংশ রোগীর তুলনায় গত কয়েক দশকে বেশি হার্ট অ্যাটাকের সম্মুখীন হয়েছেন।
চোখের কোণ কালো এবং ফোলা
ডাক্তার রাজ বলেন, চোখের কোণে কালো দাগ এবং ফোলা ভাব হতে পারে কোনো দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জির লক্ষণ। যা রক্তনালী প্রসারিত করে ছিদ্র করে দেয়ার কারণে হতে পারে। চোখের চারপাশ অনেক সংবেদনশীল জায়গা হয়ে থাকে। তাই এই সমস্যার কারণে চোখের কোণে কালো বর্ণ দেখা দেয় এবং চোখ ফুলে থাকে।
অসামঞ্জস্য মুখমণ্ডল
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক লিনা ওয়েন বলেন, অসামঞ্জস্য মুখমণ্ডল স্ট্রোকের প্রথম লক্ষণ হতে পারে। অনেক রোগী বলেন যে, আমি আয়নাতে দেখে বুঝতে পারি আমার চেহারায় একটি পরিবর্তন এসেছে। অনেক সময় মুখের এক পাশ অনেকটা অসাড় হয়ে থাকে, এমনকি হাসলেও তা নড়ে না। এই লক্ষণগুলো দেখলেই বুঝবেন যে, আপনার ছোট অথবা বড় স্ট্রোক হয়েছে। অনেক সময় স্ট্রোক সাধারণভাবে বোঝা যায় না। তাই এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো এড়িয়ে গেলে চলবেন না।
বর্ণহীন চেহারা
চেহারা বর্ণহীনতা অনেক সমস্যার নির্দেশ দেয়। ডাক্তার মল্লিকা মার্শাল বলেন, মুখের ম্লানতা শরীরের রক্ত শূন্যতার কারণ হতে পারে। চোখে মুখে হলদেটে ভাব লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। ঠোটে এবং নখে নীলাভ দাগ হার্ট এবং ফুসফুসের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
ছোট লালচে ফোড়া এবং ব্রণ
ডাক্তার রাজ বলেন, মুখে ছোট ছোট লালচে ফোড়া বা ফুসকুড়ি ওঠা এবং ব্রণ হওয়ার মূল কারণ হল হজমের সমস্যা। চুলকানিযুক্ত লালচে ফোড়া সিলিয়াক সমস্যার কারণ হতে পারে।
থুতনি কমে যাওয়া
ডাক্তার রাজ বলেন, একটি স্থুল ঘাড় এবং ছোট চোয়াল নিদ্রাহীনতার বৈশিষ্ট্য। এটাকে একটি ঘুমের ব্যাধি বলা যেতে পারে যা আপনি যখন ঘুমান, বার বার প্রায় ১০ সেকেন্ডের জন্য আপনার শ্বাস বন্ধ করে রাখে। যদি আপনি ঘুমের ভেতর খুব জোরে নাক ডেকে থাকেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাথাব্যথা অনুভব করেন এবং দিনের মধ্য ভাগেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাহলে দেরি না করে এখনি ডাক্তারের পরামর্শ নিন।