১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি
শিশুরা একা রাস্তা পারাপারে নিরাপদ নয়, যে পর্যন্ত না তারা ১৪ বছর বয়সে পৌঁছায়- বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে এ তথ্য জানিয়েছেন।
১৪ বছর বয়সের আগে তাদের চাক্ষুস বিচার এবং যানবাহনের গতি সম্পর্কে দক্ষতার উন্নয়ন হয় না, ফলে উক্ত বয়সের আগে ব্যস্ত রাস্তা পারাপার সবসময় তাদের মৃত্যু ঝুঁকিতে রাখতে পারে বলে, নতুন গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কৃত্রিম ভার্চুয়াল ট্রাফিক পরিবেশ তৈরি করে গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, ৬ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে রাস্তা পারাপারে সড়ক দুর্ঘটনার হার ৮ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। ৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা দেখা গেছে ৬ শতাংশ এবং ১০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ।
এমনকি ১২ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রেও ব্যস্ত সড়কে পারপারের সময় নিরাপদ দুরত্ব বিচারের ক্ষমতার অভাবে ২ শতাংশের বেশি সময় দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে। গবেষণা প্রবন্ধটি ‘এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি : হিউম্যান পারসেপশন অ্যান্ড পারফরম্যান্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক জোডি প্লুমার্ট বলেন, ‘অনেক অভিভাবক মনে করে রাস্তা পার হওয়ার সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো কাজ করতে পারে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ট্র্যাফিক বন্ধ না হওয়া ব্যস্ত রাস্তাগুলোর ক্ষেত্রে এমন ধারণা প্রযোজ্য নয়।’
হেঁটে রাস্তা পারাপার এবং অপর প্রান্তে পৌঁছানোর সময়ের হিসাব-নিকাশটা বয়স্কদের জন্য সহজ। কিন্তু অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের রাস্তা পারাপারের সময় একটি গাড়ি পাস করার জন্য সূক্ষ্ম দক্ষতা তৈরি নাও হতে পারে- যেমনটা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে থাকে।
অধ্যাপক প্লুমার্ট বলেন, ‘ছোটরা খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে চায় না, সেই সঙ্গে কম পরিপক্কতা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি করে তোলে।’
অধ্যাপক প্লুমার্ট এবং সহকর্মীরা ৬, ৮, ১০, ১২ এবং ১৪ বছর বয়সীদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে এই গবেষণাটি চালিয়েছেন। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে ভার্চুয়াল গাড়ির মাধ্যমে রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে ২৫ মাইল পার সেকেন্ড গতির আসা গাড়ির ক্ষেত্রে পরীক্ষা চালানো হয়। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বয়সের গ্রুপ প্রায় ২,০০০ ট্রিপের মধ্যে ২০ বার রাস্তা অতিক্রম করে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৈরিকৃত ভার্চুয়াল পরিবেশে এই গবেষণাটি চালানো হয়। ৬ বছরের বাচ্চারা রাস্তা পারাপারে আট শতাংশ সময় গাড়ি দুর্ঘটনায়, ৬ বছর বয়সীরা ছয় শতাংশ, ১০ বছর বয়সীরা পাঁচ শতাংশ এবং ১২ বছর বয়সীরা দুই শতাংশ সময় দুর্ঘটনায় পড়েছে। ১৪ বছর বয়সী এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা ছিল না।
নিরাপদ রাস্তা পারাপারে দুই ধরনের সমস্যা দেখা গেছে। প্রথম তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা- একটি চলমান গাড়ি এবং একটি আসন্ন গাড়ির মধ্যে ফাঁক বিচার, ক্রশ থেকে তার গতি এবং দূরত্ব গ্রহণ। অল্পবয়স্ক শিশুদের ক্রমাগত সঠিক ধারণাগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অসুবিধা ছিল।
দ্বিতীয় সমস্যা ছিল গাড়ির গতির ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞান- একটি গাড়ি ঠিক পাস করার পর কেমন পদক্ষেপে যেতে হয়। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা গাড়িগুলোর মধ্যে রাস্তা পার করার জন্য কম সময় দেয়, বয়স্কদের মতো সুনির্দিষ্ট হওয়ার মতো অক্ষম।
বেশিরভাগ বাচ্চারা বয়স্কদের মতো বুঝতে পারে একটি গাড়ির চলে যাওয়া এবং আরেকটি গাড়ির আসার গ্যাপটি কিন্তু তারা বয়স্কদের মতো ধৈর্য ধরে পার হতে পারে না।
গবেষকরা সুপারশি করেন, রাস্তা পারাপারে বাবা-মায়েরা যেন তাদের সন্তানদের ধৈর্য ধরতে শেখায় এবং ফাঁকা সময়টা বাছাই করতে উৎসাহিত করে।