প্রথম হয়েও বিকেএসপি’তে ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কায় সুবর্ণা
অনলাইন ডেস্ক:
তার ঝুলিতে স্কুল ও জাতীয় পর্যায়ে অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক। এ বছর অর্জন করেছে দৌড় ও দীর্ঘ লাফে জেলা, বিভাগ এবং অঞ্চল পর্যায়ে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্চ পদক।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) তে চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার।
এমনই একজন সফল ও উদীয়মান অ্যাথলেটের নাম সুবর্ণা খাতুন। কিন্তু এতসব অর্জনের মাঝেও তার পরিবারের ওপর ভর করেছে বিষাদ আর হতাশার ছায়া। কারণ অর্থের অভাবে সুযোগ পেয়েও বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারছে না সুবর্ণা। দরিদ্র ভ্যান চালক বাবার পক্ষে তার ভর্তির টাকা যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।
সুবর্ণার ভর্তি হতে প্রয়োজন ২৩ হাজার টাকা। আর ভর্তি ফি সহ সব টাকা জমা দেয়ার শেষদিন ৯ মার্চ। সুবর্ণার বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নের ফেঁচুয়ান গ্রামে। সে সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
সুবর্ণার বাবা একজন অটোভ্যান চালক। শুধু বাড়ির চার শতক জমি ছাড়া আর কোন জায়গা জমি নেই। তিন বোনসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার তাদের। পরিবারের খরচ বহন করে সুবর্ণার ভর্তির টাকা দিতে পারছেন না অসহায় বাবা।
পারিবারিক ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুবর্ণা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০২১ সালে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত বার্ষিক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ২০০ মিটার এবং রশি দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে।
এরপর ২০২২ সালে জেলা, উপজেলা, উপ-অঞ্চলে (আট জেলা) দীর্ঘ লাফে প্রথম এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। পরে জাতীয় পর্যায়ে দিনাজপুর স্টেডিয়ামে ২০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক পায়।
এ বছর উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল ও অঞ্চল পর্যায়ে ১০০ এবং ২০০ মিটার দৌড় ও দীর্ঘ লাফে এবং রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হয় সুবর্ণা। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে যশোরে রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণ পদক পায় এবং দীর্ঘ লাফে রৌপ্য পদক এবং দৌড়ে ব্রোঞ্চ পদক পায়।
এ বছরের গত ৩১ জানুয়ারি বিকেএসপিতে অ্যাথলেটিক্স বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় বালিকা বিভাগ থেকে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করে সুবর্ণা। এছাড়া শেখ কামাল অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে।
বিকেএসপিতে তার ভর্তি হতে সব খরচ মিলে ২৩ হাজার টাকার প্রয়োজন। কিন্তু তার দরিদ্র বাবার পক্ষে এত টাকা যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।
সুবর্ণার বাবা রাসেল শেখ বলেন, আমি গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। আমি চাই আমার মেয়েটা খেলাধুলায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব জয় করুক। কিন্তু আমার মেয়ের ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
সুবর্ণার মা গৃহিনী সালমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ভ্যান চালিয়ে যে টেকা পায়, তা দিয়ে চাল ডাল কিনে খাই। এখন মেয়েটাকে ভর্তি করাই তো কঠিন হয়ে গেছে। টাকার জন্য কি আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে না?
সুবর্ণা জানায়, আমার স্বপ্ন আমি বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী হতে চাই এবং অলিম্পিক গেমস এ স্বর্ণ পদক জয় করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ শিখরে তুলে ধরতে চাই।
সুবর্ণার প্রশিক্ষক এবং ওই বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক এনামুল হক বলেন, সুবর্ণা এমনই একটি মেয়ে যার ইচ্ছা শক্তি প্রবল। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সে কঠোর পরিশ্রম করতে দ্বিধাবোধ করেনা। তার পাশে দাঁড়ালে সে একদিন দেশের সম্পদ হয় উঠবে।
সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, সুবর্ণা আমাদের বিদ্যালয়ের একজন গরীব ও মেধাবী ছাত্রী। সে যদি অনুশীলন অব্যাহত রাখে এবং বিকেএসপি ভর্তি হতে পারে তাহলে সে অবশ্যই আগামীতে বড় মাপের অ্যাথলেটিক্স হতে পারবে।
সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার বলেন, আমাদের এলাকায় সুবর্ণার মত একজন অ্যাথলেটিক্স গড়ে ওঠায় আমরা গর্ববোধ করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করেছি। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হবে।