আ.লীগ দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে : মির্জা ফখরুল
অনলাইন ডেস্ক:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন। ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মানুষ এখন সত্য কথা লেখেও না, বলেও না। যারা প্রতিবাদী তারাও আর সত্য কথা বলে না। তারা আওয়ামী লীগের অন্যায়ের প্রতিবাদও করেন না। বর্তমানে দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা। কই তারা তো ভিন্নমতের খবর দেখাতে ও বলতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। তাহলে বাংলাদেশে কেন? আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা সেসময় বলেছিল—বাংলাদেশে যে দল ক্ষমতায় যায় পরবর্তীতে তারা ফের ক্ষমতায় থাকার জন্য ম্যানিপুলেশন করে। এমনকি আওয়ামী লীগ ওই দাবিতে দেশে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছিল। বাসের মধ্যে গানপাউডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে। একপর্যায়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। দলমত নির্বিশেষে সবার একটা মত ছিল—বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক। জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেরাই ১৯৭৫ সালে সেই পদ্ধতি নষ্ট করে ফেলেছে। কারণ আওয়ামী লীগ সব সময় সামন্ততন্ত্রে থাকতে চায়। তাদের মধ্যে জমিদারি ভাব সব সময় থাকে। তারা ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। সেজন্যই ওই সময় তিরিশ হাজার তরুণ-যুবককে হত্যা করেছে। কারণ তারা সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়েছিল। জনগণ তাদের বিরুদ্ধে এতটা ক্ষেপে গিয়েছিল যে, তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজকে ভয় পেলে চলবে না। আবারও আমাদেরকে জেগে উঠে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। এতে আমরা জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব, তা না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে আবারও পুরোনো ফাঁদ পেতেছে। তারা দেখাচ্ছে যে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে। তারা দেশের মানুষকে বোকা ভাবছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের ফাঁদে পা দেবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই প্রথমে নিজেরা আদালতকে ব্যবহার করে সেই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে—একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। এজন্য যিনি রায় দিয়েছেন, সেই বিচারক খায়রুল হককে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এবার দেশের তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ জেগে উঠেছে। আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই। তবেই আমাদের দাবি আদায় করা সম্ভব হবে।’
জাগপার সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত হোসেনের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ডিএল’র সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এম শাওন সাদেকী, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দিনাজপুর জেলার সভাপতি রকিব চৌধুরী মুন্না, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি আ স ম মিসবাহ উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ হুমায়ূন রশিদসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা।