বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল

0 119

অনলাইন  ডেস্ক:

বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল সোমবার (৮ মে)। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখের এই দিনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

তাঁর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। এদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অনেক কবিতা ও গান ছিল সীমাহীন প্রেরণা উৎস। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। কবির গান-কবিতা এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভূত সাহস যোগায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধেই শুধু নয়, আমাদের প্রতিটি সংগ্রামে চিরকালই কবির রচনাসমূহ প্রাণের সঞ্চার করে।

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আগামীকাল নোবেল বিজয়ী এই বাঙালি কবিকে স্মরণ করবে তার অগণিত ভক্ত। শুধু দুই বাংলার বাঙালিই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষীরা কবির জন্মবার্ষিকীর দিবসটি পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও পরম শ্রদ্ধায়। এবার জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সমাজ সংস্কার ও রবীন্দ্রনাথ।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে।

এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

‘আজি হতে শতর্বষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/শত কৌতূহল ভরে/. . . . .আজি হতে শতবর্ষ পরে/এখন করিছো গান সে কোন নুতন কবি/তোমাদের ঘরে!’

একশ বছরেরও বেশি আগে বাঙালি পাঠকদের প্রতি এই জিজ্ঞাসা ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। নানা সংকট-আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রসৃষ্টি আমাদের চেতনায় বরাবর স্পর্শ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। শত বছর পরে এখন অনেক নতুন কবি এসেছেন, নব নব সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত স্ফীত হচ্ছে আমাদের সাহিত্য ও সংগীতের ভুবন। তারপরেও আমাদের রবীন্দ্রনাথ মাত্র একজন। এখনকার নবীনদের সৃষ্টির উৎসও তিনি। এখনো জীবনের সবকিছুতে হাত বাড়াতে হয় রবীন্দ্রনাথে।

জন্মের দেড় শতাধিক বছর পেরিয়ে এবং মৃত্যুর অনেক বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ এখনও কেন প্রাসঙ্গিক? এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং প্রয়াত শিক্ষাবিদ এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, “বাঙালির এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত। রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালির মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্যদিয়ে বাঙালি মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়। দেড়শত বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরূক হয়ে আছেন।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.