ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন বেঁচে যাওয়া ঝিনাইদহের আক্তারুজ্জামান
অনলাইন ডেস্ক:
ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ২৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। আর এতে আহত হয়েছে ৮৫০ জনের বেশি। অনেকেই ট্রেনের ভেতরে আটকা পড়েছেন। উদ্ধারকাজ এখনো চলছে। তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ডাউন লাইনে ছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ওডিশার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মিনিট পাঁচেক পর আপ লাইন দিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিল চেন্নাইগামী শালিমার–চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হঠাৎ এই ট্রেনেরও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
এ সময় পাশের একটি লাইনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালবাহী একটি ট্রেন। করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে প্রথমে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিতে আঘাত করে। পরে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রেনের ওপর গিয়ে আছড়ে পড়ে।
ভারতের ওডিশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সামন্তা এলাকার যাত্রী আক্তারুজ্জামান। তিনি ও তার স্ত্রী দুর্ঘটনাকবলিত করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। আক্তারুজ্জামান মহেশপুর সরকারি পদ্মপুকুর শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। তার স্ত্রী নূরজাহান একজন গৃহিণী। চিকিৎসার জন্য তারা করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে তামিলনাড়ু রাজ্যের ভেলরে যাচ্ছিলেন।
বেঁচে যাওয়া ঝিনাইদহের যাত্রী আক্তারুজ্জামান বললেন, স্ত্রী নুর জাহানের চোখের সমস্যা। বেশ কয়েকবার ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন। এবার সিদ্ধান্ত নেন ভেলর গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। সেই ইচ্ছায় গত ১ জুন ভারতে যান। এরপর ট্রেনের টিকিট নিয়ে শুক্রবার দুপুর শালিমার স্টেশনে হাজির হন। এদিন দুপুর ৩টা ২০মিনিটে তাদের বহনকরা করমন্ডল ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা যখন উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার বাহানাগাঁ এলাকায় পৌঁছান, তখন দুর্ঘটনা ঘটে। তারা বিকট শব্দ ও ঝাঁকুনি অনুভব করেন। ট্রেনের মধ্যে থাকা হাজার হাজার মানুষ কান্নাকাটি শুরু করেন। তারাও বুঝতে পারেন ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তারা ছিলেন ২-এ এসি বগিতে, তাদের সামনে ছিল আরও কয়েকটি বগি। তারা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে সামনে কী ঘটেছে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত স্থানীয়রা তাদের যেতে বাধা দেন। ওই সময় স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
আক্তারুজ্জামান জানান, ট্রেন থেকে তাদের সরিয়ে দেয়ার পর তারা বাসযোগে কিছুটা দূরে এক এলাকায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে পরদিন (শনিবার) সকালে ভুবনেশ্বর স্টেশন থেকে পন্ডিশ্রী নামে আরেকটি ট্রেনে তুলে দেয়া হয়েছে। তারা এখন ভেলরের পথে।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে বাসে উঠা পর্যন্ত সময়টুকু তাদের আতঙ্কে কেটেছে। সামনে কী হচ্ছে, তা তারা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। ট্রেনে অনেক বাংলাদেশি ছিল, তারা কেমন আছে সেটাও জানার সুযোগ ছিল না।
আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী নুর জাহান জানান, তারা যে বগিতে ছিলেন সেখানে দুইজন বাংলাদেশি ছিল। তবে পেছনের অন্য কামরাগুলোতে আরও অনেক বাংলাদেশি ছিল। পরের ট্রেনে তাদের তুলে দেয়ার পর বুঝতে পেরেছেন অনেক বাংলাদেশি দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনে ছিল। তবে কারও কোনো তথ্য তারা পাননি। মৃত্যুর খবরও তাদের কানে পৌঁছায়নি।
এদিকে ওডিশায় দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটিতে বাংলাদেশিও থাকতে পারে। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি যাত্রী এই ট্রেনে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাতায়াত করেন। এ কারণে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন দুর্ঘটনা বিষয়ক তথ্য জানতে বাংলাদেশিদের জন্য একটি হটলাইন নম্বর (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটস অ্যাপ) দিয়েছে।