হিজাব পরে কলেজে যোগদানের অনুমতি দিল বোম্বে হাইকোর্ট
বোম্বে: ভারতের বোম্বে হাইকোর্ট একজন মুসলিম ছাত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে হিজাব পরে কলেজে যোগদানের অনুমতি দিয়েছে। তাকে মুসলিম নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিজাব পরতে দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মহারাষ্ট্রের থানের ‘সাই হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের’ ওই শিক্ষার্থী হিজাব পরার অনুমতি দিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।
তার পিটিশনে বলা হয়, তাকে হিজাব পরে তার কলেজে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়া হোক অথবা অন্য কোনো কলেজে তাকে স্থানান্তর করার অনুমতি দেয়া হোক; যেখানে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুশীলন করতে পারেন। এছাড়াও কারো ধর্ম বিশ্বাসের ওপর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে না পারে, সেজন্যও জন্য পিটিশনে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়। তার আইনজীবী মিহির দেসাই জানান, হিজাব পরে লেকচারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি না দেয়ার কারণে তার মক্কেল ঠিকমত কলেজে উপস্থিত হতে পারেন নি। কলেজে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দিন উপস্থিতি না থাকার কারণে তাকে গত বছরের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি বলে আইনজীবী মিহির দেসাই জানান।
মেডিকেল কলেজের ওই শিক্ষার্থী আদালতকে জানায় যে, তিনি যখন কলেজে ভর্তি হন, তখন তিনি বোরখা ও ঘোমটা পরতেন না। ওই সময় এই নিষেধাজ্ঞা কেবল বোরখাতেই ছিল। বিচারপতি আর এম সাভান্ট ও সারাঙ্গ কোতওয়ালের একটি বেঞ্চে এই রিট আবেদনের শুনানি হয়। আবেদনকারী তার আবেদন বলেন, তিনি কেবল হিজাব এবং একটি লম্বা গাউন পরতে চান এবং অন্য ছাত্রীদের মতোই এর উপরে অ্যার্পন পরার জন্য ইচ্ছুক। সব পক্ষের বক্তব্য শুনানির পরে আদালত শিক্ষার্থীদেরকে হিজাব এবং গাউন পরার অনুমতি দিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেন। কলেজ থেকে স্থানান্তরের জন্য প্রার্থনার প্রয়োজন নেই জানিয়ে আদালত পিটিশনটির নিষ্পত্তি করেন।
মসজিদে মুসলিমদের প্রার্থনার অধিকার খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত সুপ্রিমকোর্টের
‘রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ’ মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে মুসলিমদের মসজিদে প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের সিদ্ধান্ত, সাংবিধানিক বেঞ্চে এর নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। ইসমাইল ফারুকী বনাম কেন্দ্রীয় সরকার মামলায় ১৯৯৪ সালের রায়ে বলা হয়েছিল, মুসলিমরা যে কোনো জায়গায় প্রার্থনা করতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টে আজ বৃহস্পতিবার মুসলিম সংগঠনগুলির তরফে আইনজীবী রাজীব ধবন যুক্তি দেন, এই ধারণা ঠিক নয়। মুসলিমদের কাছে যে কোনও মসজিদেরই গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। তাই মসজিদের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্ক নতুন করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ধবনের প্রশ্ন, বেআইনি ভাবে ঢুকে মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার পরেও সেখানে কেন শুধু হিন্দুদেরই প্রার্থনা করার অধিকার দেওয়া হয়েছে?
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় কোনো শিষ্টাচার এখনো বজায় থাকলে, ওই মসজিদ নতুন করে তৈরি করা হোক। অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে হিন্দুদের নয়, প্রার্থনা করার অধিকার দেয়া হোক মুসলিমদের।’
বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আদালতে দাবি তুলেছিলেন, অযোধ্যা মামলা শুধুই জমি বিবাদ নয়। রামের জন্মভূমিতে পুজো করা তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। জমির অধিকারের চেয়ে যা অনেক বড়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শীর্ষ আদালত আজ জানিয়েছে, স্বামীর আবেদন অন্য উপযুক্ত বেঞ্চ খতিয়ে দেখবে।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আগেই জানিয়েছিল, রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলাকে শুধুমাত্র জমি বিবাদ হিসেবেই দেখা হবে। সেই কারণেই অযোধ্যার গোটা মামলাটি এখনই সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠাতে রাজি হয়নি শীর্ষ আদালত এবং একই কারণে, জমির মালিকানা নিয়ে বিবদমান পক্ষ ছাড়া, অন্য যাবতীয় আবেদনও এ দিন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
শ্যাম বেনেগল, অপর্ণা সেন, তীস্তা সীতলবাড়ের মতো ৩২ জন আবেদন করেছিলেন, হিন্দু বা মুসলমান, কারো পক্ষেই যেন রায় না দেওয়া হয়। তাতে হিংসা ছড়াবে। সেই আবেদনও খারিজ হয়েছে এ দিন।
পুণের শিক্ষাবিদ বিশ্বনাথ কারার আর্জি ছিল, বিতর্কিত জমিতে তিনি নিজের খরচে ‘পিস সেন্টার’ তৈরি করতে চান। সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতা করুক। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর নিজেই মধ্যস্থতা করতে রাজি বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বিচারপতিরা জানান, তারা মধ্যস্থতার চেষ্টায় যাবেন না। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে সেই চেষ্টা করতে পারেন।