দুর্নীতির মামলায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ১২ বছরের সাজা
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিলের (ওয়ানএমডিবি) অর্থ কেলেঙ্কারির প্রথম মামলায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন প্রধানমন্ত্রীকে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
একই সঙ্গে তাকে ২১ কোটি রিঙ্গিত জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার বেশি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থ পাচার এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) এই রায় ঘোষণার আগে তার বিরুদ্ধে আনা ৭ অভিযোগের প্রত্যেকটিতেই দোষী সাব্যস্ত হন। বিচারক মোহাম্মদ নাজলান গাজ্জালি জানান, ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি ধারায় নাজিবকে ১২ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এছাড়া বিশ্বাসভঙ্গের তিনটি ধারা এবং অর্থ পাচারের তিনটি ধারার প্রতিটির জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে এসব সাজা একসঙ্গে চলায় তাকে মোট ১২ বছর কারাগারে থাকতে হবে। এর পাশাপাশি তাকে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার জরিমানাও করা হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাবেন তিনি। বিকালে প্রত্যেকটি অভিযোগের জন্য আলাদাভাবে সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। যদিও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব।
এর আগে, বিচারক বলেন, “এ মামলার সমস্ত তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রসিকিউশন তাদের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।”
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে নাজিবের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ৪২ মিলিয়ন রিঙ্গিত স্থান্তরিত হয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে সবগুলো অভিযোগই বরাবরের মতো অস্বীকার করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার আর্থিক উপদেষ্টারা তাকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯ সালে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ওয়ানএমডিবি তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাজিব। তবে বিনিয়োগের বদলে এই তহবিলের অর্থ বিলাসী জীবনযাপন, হলিউডের একটি চলচ্চিত্র ও একটি সুপারইয়টের পেছনে ব্যয় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে থাকা ৪২টি অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশই ওয়ানএমডিবি সম্পর্কিত। এর কেন্দ্রে আছে ওয়ানএমডিবির একটি ইউনিট এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল থেকে নাজিবের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চার কোটি ২০ লাখ মালয়েশীয় রিঙ্গিত সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।
এ মামলায় অর্থ পাচারের তিনটি, শপথ ভঙ্গের দায়ে তিনটি ফৌজদারি অভিযোগ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। রায়ে এর সবগুলো ধারাতেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া নাজিবের স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অনেক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে।
আরো যারা জড়িত রয়েছে:
তদন্তের অন্যতম প্রধান একজন টার্গেট হলেন মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী রো তায়েক ঝো। দেশে তিনি ঝো লো নামে পরিচিতি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ – তিনি এবং তার কয়েকজন সহযোগী রাষ্ট্রীয় ঐ তহবিল থেকে প্রচুর টাকা সরিয়েছেন যার একটি অংশ দিয়ে তিনি ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ইকোয়ানামিটি নামে একটি সুপার ইয়ট বা প্রমোদতরী কেনেন।
২০১৮ সালে ঐ প্রমোদ তরীটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে।
ওয়ান এমডিবি তহবিল থেকে টাকা পাচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুর সহ কমপক্ষে ছটি দেশে তদন্ত হচ্ছে। এই কেলেঙ্কারিতে ভালোভাবেই জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান শ্যাকস। মালয়েশিয়ার সরকার এই ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
গোল্ডম্যান শ্যাকসের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অপারেশসনসের প্রধান টিম লেইসনার ঘুষ এবং টাকা পাচারের ভূমিকা রাখার কথা স্বীকার করেছেন। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ডেভিড সলোমন এই কেলেঙ্কারিতে লেসনারের সংশ্লিষ্টতার জন্য মালয়েশিয়ার জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তিনি দাবি করেছেন যে তার ব্যাংকও প্রতারিত হয়েছে।