শিল্পায়নের যাত্রায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল “বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর” । ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল আর চরের বিশাল এলাকা জুড়ে চলছে মেরিনড্রাইবসহ আলাদা আলাদা প্রকল্পের কাজ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের ১০০ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন-নয়নাভিরাম ‘শেখ হাসিনা সরোবর’। আর এ সরোবরের পাড়ে নির্মিত হবে দুটি আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারকা হোটেল ও একটি রিসোর্ট। একই সাথে থাকবে বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা। এখানে গড়ে তোলা হবে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র ও ফোয়ারা। থাকবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা। এ্ররই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে ৫০ ভাগ। এখানে পরপর দুটি সরোবর গড়ে তোলা হবে ১০০ একরে।
বেজা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শুরু করে বেজা। পরে ২০১৯ সালের ৪ মার্চ শেখ হাসিনা সরোবর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের ২১২ একরের মধ্যে ১০০ একরে থাকবে জলাধারা বা হ্রদ। অবশিষ্ট ১১২ একরে নির্মাণ করা হবে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারকা হোটেল ও রিসোর্টসহ কয়েকটি স্থাপনা। হোটেলের উচ্চতা হবে ২২ তলা। এসব হোটেল ও রিসোর্টে থাকবে বিনোদনের ব্যবস্থা। সরোবরের পাড়ে স্থাপন করা হবে জাদুঘর, শপিং কমপ্লেক্স, সিনেমা হল ও বিনোদন কেন্দ্র। বর্ষা মৌসুমে থাকবে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা। শুষ্ক মৌসুমে তা অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্যান্য অংশের কাজে ব্যবহৃত হবে। সরোবরের দুই ধারে ম্যানগ্রোভ বনায়নে থাকবে বন্যপ্রাণী ও পাখির অভয়াশ্রম। থাকবে হাঁটার পথ ও ব্যায়ামাগারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা।। এবং পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হবে ৩৫০ ফুট উচ্চ টাওয়ার।
ইকোনোমিক জোনকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। গড়ে উঠছে ছোট-বড় নানান স্থাপনা, পিচঢালা পথ ও ভাঙন-প্রতিরোধী বাঁধ। প্রকল্পের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে আলাদা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নির্মাণ করা হবে জাহাজ টার্মিনাল। স্থাপন করা হচ্ছে সুপেয় পানি সরবরাহে গভীর নলকূপ। সম্প্রতি জলোচ্ছাস ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় তৈরী হয়েছে সুউচ্চ বেড়িবাঁধ ও সুইচগেইট।
আলাদা যোগোযোগ ব্যবস্থার জন্য দ্রুতবেগে কাজ চলছে বঙ্গোপসাগরের তীর হয়ে মেরিনড্রাইভ সড়কের । প্রকল্প এলাকায় যাতায়াতে ইতিমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চার লেনের ১০ কিলোমিটারের সংযোগ সড়কসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালামালা আনা-নেওয়ার জন্য এ সড়ক সংযুক্ত হবে মিরসরাই ইকোনোমিক জোনে। নির্মাণ করা আলাদা স্থল বন্দর। এই শিল্পনগরের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার নতুর দ্বার। বেগবান হবে দেশিয় অর্থনীতির চাকা।
মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুরচর, শীলচর, মোশাররফচর ও পীরেরচর এলাকা, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকু- অংশের ধু-ধু চরাঞ্চলজুড়ে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপান। প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। চট্টগ্রামের সীতাকু ও মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। চট্টগ্রাম বন্দরের অনতিদূরে সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা এ শিল্পনগরে ২৫টি আলাদা জোন নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে দেশিয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান। দেশের বৃহত্তম এই জোনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা আরো বেগবান হবে বলে জানান দেশের বিশিষ্টজনরা।