বিপরীত বিয়ে

0 329
জলিল মন্ডলকে দেখতে আসছে কনে পক্ষ। খাওয়া দাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষে জলিল মন্ডলকে অতিথিদের সামনে আনা হলো। কনে পক্ষের সামনে একটি চেয়ারে বসানো হয়েছে তাকে। তার সম্ভাব্য স্ত্রী নাদিয়া আফরোজ কোনো ভণিতা ছাড়াই সরাসরি এক পলক দেখে নিলো। যদিও জলিল মন্ডলকে সেই দৃশ্য দেখতে চোখ ট্যারা করে বহুত কৌশল করতে হলো।
জলিল মন্ডলের আশে পাশে অভয় দিতে আছে তার মা, বড় চাচা, চাচি এবং ছোট খালু। বাবা জীবিত নেই। এর আগে দু’বার তাকে দেখে গেলেও বিয়ে হয় নি। সেকারণেই এবার অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে এবং চুপিচুপি আয়োজন বলা চলে। কারণ ছেলে পছন্দ হয় নি বলে বিয়ে হচ্ছে না জানলে এলাকায় নানান বদনাম হয়।
জলিল মন্ডল সুন্দর ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে মাঝেমধ্যে কপালের বিন্দুবিন্দু ঘাম মুছছে। দিলরুবা বেগম অর্থাৎ মেয়ের মা তাকে অভয় দিয়ে বলল, ভয়ের কিছু নেই বাবা তুমি আমাদের ছেলের মতোই থাকবে। তা বাবা তুমি সকালে ঘুম থেকে কখন উঠ?
জলিল মন্ডল আস্তে করে বলল, সাতটার দিকে।
না না এতো দেরি করে উঠলে তো হবে না বাবা। ফজর নামাজের সময় উঠবে। পুরুষদের এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাতে নেই।
জলিল বাধ্য ছেলের মতো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। তার চাচি বলল, বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে। ও সব আপনি ভাববেন না। কাদের খান অর্থাৎ নাদিয়ার বাবা বলল, কলেমা জানো? উত্তরে জলিল আবারও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। তিনি দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন, কোরআন খতম দিয়েছো? জলিল মন্ডল কোনো উত্তর দিলো না। তার চাচি বলল, মুসলমানের ছেলে, কোরআন যেহেতু পড়তে পারে খতম হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। বাবা জলিল তুমি মেহমানদের একটা তেলায়ত করে শোনাও।
নাদিয়া বলল, না না শোনাতে হবে না এখন কী সেই যুগ আছে যে ছেলেদের এতো পরীক্ষা দিতে হবে! নাদিয়ার ছোট মামীও সুর মিলিয়ে বলল, মেয়ে আমাদের ঠিক বলেছে, আমরা তো গরু ছাগল কিনতে আসি নি। আত্মীয়তা করতে এসেছি। বাবা জলিল লক্ষী ছেলে, মাশাআল্লাহ আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। যেহেতু আধুনিক ছেলেমেয়ে ওরা সংসার করবে ওদের একান্তে কোনো কথা থাকলে বলতে দেয়া উচিৎ।
জলিলের বড় চাচি পাশের রুমে তাদের বসার ব্যবস্থা করে দিলো। নাদিয়া জলিলের দিকে তাকিয়ে আছে জলিলের চোখ নিচের দিকে। নাদিয়া জানতে চাইলো আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
– জি।
গুড তোমাকেও আমার বেশ ভালো লেগেছে। লাজুক ছেলেদের আমার খুব পছন্দ।
জলিলের জানতে ইচ্ছে করে কতোজন লাজুক ছেলেকে আপনি পছন্দ করেন! কিন্তু সাহস পায় না। বাসার সকলে বলেছে আধুনিক শিক্ষিতা মেয়ে যতটুকু জানতে চায় তাই বলবে। বাড়তি কোনো উত্তর দিবে না, প্রশ্ন করবে না।
নাদিয়া বললো, কিছু ভাবছো? তাহলে সঙ্কোচহীন বলতে পারো। আমি পুরুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আর তুমি তো ফ্লোরের দিকে চেয়ে আছো! একবার আমাকে দেখো! এতো লজ্জা পাচ্ছ কেনো? বিয়ের পর তো আমার সাথে বেড শেয়ার করতে হবে।
জলিল মন্ডল চোখ তুলে তাকায় নাদিয়ার দিকে বয়সে তারচেয়ে বছর পাঁচেক বড় হবে। মনেমনে ভাবে ব্যাপার না তার বন্ধু রাসেদকে যে মেয়ে বিয়ে করেছে সে তো প্রায় দশ বছরের বড়। মেয়েদের আবার বয়স! ভালো মেয়ে পাওয়াটাই বরং ভাগ্যের ব্যাপার।
জলিলের বিয়ে জুন মাসের পাঁচ তারিখে। প্রচণ্ড বৃষ্টি। সাধ্য মতো সব চেষ্টাই করেছে জলিলের মা। তার বাবা নেই তবুও ছেলের মনে যাতে কষ্ট না থাকে অথবা শ্বশুর বাড়ি থেকে কেউ কিছু না বলে সাধ্যমত সব দিয়ে দিয়েছে। চারিদিকে মহা ধুমধাম আনন্দ উৎসব, শুধু জলিলের মনে একটাই চিন্তা শ্বশুর, শাশুড়ি, শালা, শালী আত্মীয় স্বজনদের কিভাবে খুশি রাখবে প্রতিদিন। না জানি আবার ঘাড়ধরে ফেরৎ পাঠিয়ে দিবে! কেননা বিয়ে ঠিক পর থেকে যতবার নাদিয়ার সাথে কথা হয়েছে সে বারবারই বলেছে তার বাবার কী পছন্দ, মায়ের কী পছন্দ, একটা ছেলের কোন কোন বিষয়গুলো তার ভীষণ অপছন্দের ইত্যাদি।
এসব ভাবতে ভাবতেই জলিল সজোড়ে চিৎকার করে ওঠে। চিৎকার শুনে জলিলের মা দৌড়ে এসে বলেন, কী হয়েছে খোকা? কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছিস? জলিল কিছু বলে না, চুপ করে ভাবতে থাকে এ কী স্বপ্ন দেখলো সে!
রুবিনা মন্ডল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ওঠ বাবা তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। মেয়ে দেখতে যাবি না! সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
লেখক-আরমানউজ্জামান, কবি ও কথাসাহিত্যিক।
Leave A Reply

Your email address will not be published.