অভিনেত্রী জয়া’র দুই বাংলা জয়

0 172

জয়া আহসান জন্মগ্রহণ করেন গোপালগঞ্জ জেলায়। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এস মাসউদ এবং মা রেহানা মাসউদ ছিলেন একজন শিক্ষিকা। তারা দুই বোন এক ভাই। অভিনয় শুরুর আগে জয়া নাচ ও গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকা শিখেছিলেন। তিনি একটি সংগীত স্কুলও পরিচালনা করেন।ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে জয়া ছিলেন মডেল ও অভিনেতা ফয়সাল আহসানের সহধর্মিনী।

১৪ মে ১৯৯৮ সালে বিয়ে করেন। ২০১১ সালে ফয়সালের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ব্যাচেলর (২০০৪)। তিনি নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত সৈয়দ শামসুল হকের নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত গেরিলা চলচ্চিত্রে বিলকিস বানু চরিত্রে এবং রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালি চলচ্চিত্রে সাংবাদিক নবনী আফরোজ চরিত্রে অভিনয় করে টানা দু’বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

অনিমেষ আইচ পরিচালিত জিরো ডিগ্রী সিনেমায় অভিনয় করে তিনি ২০১৫ সালে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৪ থেকে ২০২১ টানা ১৭ বছর বিনোদনের দুনিয়ায় নানা রূপে জয়া আহসান। অভিনেত্রী, পরিচালক, প্রযোজক, নেপথ্য গায়িকা, সব ভূমিকাতেই সফল তিনি। এই সাফল্য তিনি অভিনয়কে আবিষ্কার করে পেয়েছেন না অভিনয় তাঁকে? সম্প্রতি এমনই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল জয়াকে। ভাবতে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি দুই বাংলার প্রথম সারির অভিনেত্রীর। তাঁর উপলব্ধি, ‘আমি অভিনয়কে আবিষ্কার করিনি। অভিনয় আমাকে আবিষ্কার করেছে।’ তারপরেই যেন টাইম মেশিনে চেপে পলকে পিছিয়ে গেলেন অভিনয় জীবনের একদম গোড়ায়। কী দেখলেন ফেলে আসা সময়? ১৭ বছরের স্মৃতি বলছে, এক দিনের জন্যও তিনি অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। অভিনয়ে আসা নিছকই কাকতালীয়। অনেকটাই, ‘সত্যজিৎ রায়ের গুপি যেমন গাইতে গাইতে গায়েন আমিও আচমকাই অভিনেত্রী।’ জয়ার কথায়, সিনেমা, অভিনয় যে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প, জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার শক্তিশালী মাধ্যম সে সব না বুঝেই
ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।

এ ভাবেই ধীরে ধীরে অভিনয় হয়ে উঠেছে তাঁর ভালবাসার জায়গা। তাঁর জীবন। ‘আমি যখন অভিনয় করে আনন্দ পেতে শুরু করলাম, তখনই বুঝতে পারলাম আমার মুক্তির পথ, জীবনের সব কিছুই অভিনয়’, স্বীকারোক্তি জয়ার। তাই ১৭ বছরে অনেক বার পড়ে গিয়েছেন, হোঁচট খেয়েছেন। আবার উঠেও দাঁড়িয়েছেন। বাধা পেরিয়ে শক্ত পায়ে হেঁটে গিয়েছেন। জয়ার জোরালো দাবি, ‘আমার ছিল জেদ।’ জয়া তাই আজীবন কৃতজ্ঞ অভিনয়ের কাছে। কারণ, আজ পর্যন্ত যত মানুষের ভালবাসা কুড়িয়েছেন সবটাই এই অভিনয়ের সৌজন্যে।

ওপার বাংলার জনপ্রিয় পরিচালক ‘অতনু ঘোষ’ বলেন ‘জয়া খুব সংবেদনশীল শিল্পী। অনেক যত্ন করে, ভাবনাচিন্তা করে, হোমওয়ার্ক করে একটা চরিত্রকে রূপ দেয়। অতনু ঘোষ জয়া আহসানকে নিয়ে বানিয়েছেন ‘রবিবার’। এই ছবির হাত ধরেই স্পেনের মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।

এই পরিচালক প্রথম আলোকে বললেন, এ দেশের মানুষের কাছে চাহিদা আছে বলেই বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা কাজ করছেন। এখানকার ছবিতে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা বড় পর্দায় দুর্দান্ত কিছু চরিত্র করে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। অভিনয়গুণের পাশাপাশি দর্শকচাহিদার কারণে এ দেশের প্রযোজক ও পরিচালকেরা তাঁদের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।

আট বছর ধরে ভারতের চলচ্চিত্রে কাজ করছেন জয়া আহসান। সেখানে তাঁর প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘আবর্ত’। ‘রাজকাহিনি’, ‘কণ্ঠ’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘বিজয়া’, ‘বিসর্জন’সহ যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে, সব কটিই প্রশংসিত হয়েছে। কলকাতায় জয়ার জনপ্রিয়তা, সিনেমায় তাঁর চাহিদা সেখানকার যেকোনো অভিনেত্রীর জন্য ঈর্ষণীয়। যদিও জয়ার কাছে সফলতা কেবলই এক গন্তব্য। সবাইকে ছাপিয়ে একা হাঁটা নয়, বরং সবাইকে জড়িয়ে থাকা। তাই তো তিনি সফল নন, তিনি স্বার্থক। ওপার বাংলা, এপার বাংলা—দুই বাংলায়ই স্বার্থক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.