একুশে বইমেলায় কথাসাহিত্যিক ইমরান মাহফুজ’র “কালান্তরের অভিযাত্রী”

0 358

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। একাত্তর পরবতী শিক্ষা সংস্কৃতি ইতিহাস ও সংগ্রামের চেতনায় সমাজ অগ্রগতি নিয়ে ভাবছেন অনেকে। কিন্তু এই ভাবনার পাটাতন যাঁরা গড়ে দিয়েছেন তাঁদের কয়জন জানে? জানা অজানা জীবনে আমাদের ইতিহাস বোধের বড়ই অভাব। এই অভাবেই ইতিহাসের দায় ও দায়িত্ব অনুভব করি না। নেই না বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যের শিক্ষা। অশিক্ষার সমাজে বাংলাভাষী এখন নিজেদের খণ্ড খণ্ড ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যা অত্যান্ত নিদারুণ বেদনার। বিশ্বাস করি প্রতিটি মানুষের শক্তি সম্বন্ধে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করবার জন্য সাহিত্য সংস্কৃতির মনন পাঠ অত্যন্ত জরুরী। জরুরী আত্মপরিচয়ের সম্যক ধারণা নেওয়া। কালান্তরের অভিযাত্রী’ বইটি সে খেয়ালে পাঠকের পাঠশালা হতে পারে, তবে বিদগ্ধ পাঠকের জন্য না!

‘কালান্তরের অভিযাত্রী বইটি মূলত বাংলা ও বাঙালি বলতে যে ভৌগলিক সীমারেখাকে বুঝায়, সে অঞ্চলের মানুষের অধিকার, সমাজ বাস্তবতা, রাজনৈতিক সচেতনতাসহ জীবন মান উন্নয়নে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের নিয়ে কিঞ্চিত নতুন আলাপ। যদিও তালিকা ও আলোচনা পূর্ণাঙ্গ না, কেবলমাত্র আমিত্ববোধের দুনিয়ায় পাঠকে ধারণা দেয়া সাথে ভাবনায় উস্কে দেওয়া। সূচিবদ্ধ অগ্রগামী একুশ, ঐতিহাসিক বহুঘটনার স্বাক্ষী। তন্মধ্যে বৃটিশ আসার পর বঙ্গভঙ্গ, স্বদেশী আন্দোলন, লাহোর প্রস্তাব, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন ও যুক্তফ্রন্ট সরকারের একুশদফা ও একাত্তরের স্বাধীনতা, দাগ কাটার মতো সময়। কালের পরিক্রমায় প্রাণের দাবীতে সামাজিক মুক্তি ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে জাগিয়ে তুলেছেন বিপ্লবীরা।

এঁরা নানাভাবে সমাজসংস্কার, সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিক্ষেত্রে যে-অবদান রেখেছিলেন তা বাঙালি জীবনকে নানাভাবে উদ্দীপিত করেছেন। কুসংস্কারমুক্ত সমাজ নির্মাণের জন্য নিরলস প্রয়াস সকলের জীবনসাধনার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে গিয়েছিলো। তাঁরা সকলেই অনুসরণযোগ্য ক্ষেত্র বিশেষ। সবার জীনসাধনা, আদর্শ ও নীতিনিষ্ঠা আত্মপরিচয়, আগ্রহী পাঠকদের উজ্জীবিত করুক আশায় গ্রন্থটি। এঁদের মধ্যে কারো কারো সংকীর্ণ ও সাম্প্রদায়িক অধ্যায় থাকলেও ‘বাঙালি’ হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে, তারাই আবার নিজগুণে সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতার ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি চেয়েছেন বৃহত্তর জীবনের আশায়। বুঝেছেন দৃশ্যত জীবন প্রবাহের সত্যরূপ প্রকাশিত হয় সাহিত্য সংস্কৃতিতে।

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষের ভূমিকায় বইটি ৩টি পরিচ্ছেদে ২১টি রচনা দিয়ে সাজানো হয়েছে- প্রথমে ‘সাহিত্য সংস্কৃতি মনন’ শিরোনামে আছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মীর মশাররফ হোসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, আবদুল কাদির। সমাজ সংস্কার’ শিরোনামে আছেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী, মুনশী মেহেরুল্লাহ, ইসমাঈল হোসেন শিরাজী, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, মওলানা আকরম খাঁ। রাজনীতি ও মানুষের মুক্তি’ শিরোনামে আছেন শেরে বাংলা একে ফজুলুল হক, মওলানা ভাসানী, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর, আবুল মনসুর আহমদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

একুশজন নেওয়ার কারণ- বঙ্গভঙ্গ ও লাহোর প্রস্তাবের পরে সবচেয়ে আলোচিত যুক্তফ্রন্ট সরকারের একুশ দফা; সেই প্রেক্ষিতে একুশের চেতনায় সমাজ এগিয়ে গেছে বহুদূর। ‘কালান্তরের অভিযাত্রী বইটি সে একুশ গণনায় অনুপ্রেরণা হিসেবে তিনটি উপশিরোনামে সূচিবন্ধ। প্রায় সব লেখা প্রকাশিত হয়েছে দ্য ডেইলি স্টার বাংলা অনলাইনে। বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক, অসম্প্রদায়িক , ভাষার ভিত্তিতে ভেদাভেদহীন যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা, চিন্তা ও আদর্শে তাঁদের গ্রহণ করলে নিজেরাই উপকৃত হবো।

“কালান্তরের অভিযাত্রী” নামে লেখকের নতুন প্রবন্ধের বইটি পাওয়া যাবে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহ্য প্রকাশনীর ৬ নম্বর প্যাভিলিয়নে। আর বইটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ করেছেন আনোয়ার সোহেল। মেলার বাইরেও ঘরে বসে বইটি রকমারি ও বই বাজার থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.