আজ ঐতিহাসিক ছয়দফা দিবস

0 357

মোঃ জাকির হোসেন তামিম

প্রতি বছর ৭ই জুন দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।১৯৬৬ সালের এ দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উথ্যাপিত বাংলাদেশের মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবির পক্ষে দেশে গণআন্দোলনের সূচনা হয়।

‌আওয়ামী লীগের ডাকে সাড়া দিয়ে এই দিনে হরতালে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ-টঙ্গীতে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআর’র গুলিতে শহীদ হন মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাংলাদেশী।এতে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ ধারন করে।সমস্ত বাংলাদেশী এক যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক আপোষহীন সংগ্রামের সূত্রপাত হয়। এই ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাংলাদেশি জাতি।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোর সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন। পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায়; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার আহবান জানান। তবে পরিতাপের বিষয়,; এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক কমিটি গুরুত্ব আরোপ করেনি। তারা অত্যান্ত নিগ্রহের সাথে দাবি বাতিল করে। প্রতিবাদ সূরুপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান উক্ত সম্মেলন প্রত্যখান করেন এবয় লাহোরে অবস্থানকালেই ৬-দফা উত্থাপন করেন। যা নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারপুষ্ট কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী – উগ্রবাদী নেতা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ ই মার্চ ৬-দফা দাবিরএবং এ নিয়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করিয়ে দেন।ছয়দফা দাবি গুলো ছিল অত্যান্ত যুক্তিযুক্ত; যা নিন্মে বর্নীত হলঃ

প্রথম দফা : সরকারের বৈশিষ্ট হবে যৌথরাষ্ট্রীয় সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যৌথরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো হতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে সরাসরি এবং সার্বজনীন স্বীকৃত প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় সভার প্রতিনিধি নির্বাচননকরে জনসংখ্যার ভিত্তিতে মূল্যায়িত হবে।

দ্বিতীয় দফা : কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয় এবং তৃতীয় দফায় ব্যবস্হানদ্বারা শর্তসাপেক্ষ বিষয়াদি।

তৃতীয় দফা : পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা অবাধে দুটি অঞ্চলই উভয় দিকে বিনিময় হবে। যদি সেটি সম্ভব না হয়,তবে এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে। তবে শর্তে থাকে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা অবশ্যই তৈরি করতে হবে, যার দ্বারা দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে এবং সেটিতে বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না হয়।

চতুর্থ দফা : অঙ্গরাজ্যের কাছে রাজস্ব নির্ধারণ এবং আদায় ব্যবস্হা। তবে প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান দেয়া যেতে পারে। সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টি সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অসম্ভাবিত ভাবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে ন্যাস্ত থাকে।

পঞ্চম দফা : যৌথরাষ্ট্রের প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে, সেই অঙ্গরাজ্যের সরকার যেন নিজেদের নিয়ণ্ত্রনাধীনে তার হিসাব রাখতে পারে, সংবিধানে সেরূপ বিধান হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হলে তা সংবিধান নির্দেশিত বিধি দ্বারা নির্ধারিত অনুপাতের ভিত্তিতে অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে তা আদায় করা হয়। সংবিধান বিধান দ্বারা দেশের বৈদেশিক নীতির কাঠামো; যার দায়িত্ব নিয়োজিত থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য সহ অন্যন্য বিষয় সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকবে।

ষষ্ঠ দফা : জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সাহায্যের – সহোযোগিতার জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।

ছয় দফা কর্মসূচি তথা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশিদের প্রথম জাতীয় মুক্তির সনদ। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা ছিল বরাবরই নাগরিক অধিকার শূন্য। দেশ ভাগের প্রথম থেকেই পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিম অংশের একধরনের ঔপনিবেশিক শাসন–শোষণের রাজত্ব কায়েম হয়। পাকিস্তানে বাংলাদেশের সমস্যার প্রকৃতি ছিল পুরোপুরি জাতিসত্তাগত দ্বারা আবিষ্ট । এটি যথার্থভাবে অনুধাবন করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর কালজয়ী ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যা দ্রুততার সাথে বাংলাদেশিদের মধ্যে মুক্তির চেতনা জাগ্রত করে একটা বিশাল আন্দোলনের পরিনত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পাই নতুন মানচিত্র। নতুন চির সবুজ দেশ।
আমার সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.