বরষা বাদলের দিন
আজ ভোরে ঝুম বৃষ্টিতে ঘুম ভাঙলো। টিনের চালে ঝুমঝুম টানা বৃষ্টি। এভাবে বৃষ্টি হলে আর ঘুমাতে পারি না। বাইরে এসে প্রকৃতি দেখা লাগে। বৃষ্টি থাকতেই ঘরের সাথে লাগোয়া বৈঠক খানায় বসে পড়লাম। বৃষ্টিতে চারদিকের পরিবেশ শীতল হয়ে আছে। হালকা বাতাসে গায়ে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ছোঁয়া এসে লাগছে। বৃষ্টির এমন ছন্দে মনে একটা ফুরফুরে ভাব আইছে। প্রকৃতির সাথে বৃষ্টির এই খেলা কেবল গ্রামেই উপভোগ করা যায়।
উঠোনে ঝরা পাতা দেখতে দেখতে বৃষ্টি বাড়তে থাকলো। ক্রমশই বাড়ছে। আকাশের কোন হুঙ্কার বা গর্জন নেই। বিরামহীন বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টির সাথে কদমের হলদে পাতা ঝরে পড়ছে সারা উঠোনে। গাছে কদমের ফুল নেই। উঠোনে আরো নানান গাছের পাতা পড়ে আছে এসবের মাঝে হলদে পাতায় ভরে গেছে উঠোন, যেন ফুল পড়ে আছে।
জানালার পাশেই একটা কাঁঠাল গাছ লিকলিকে দাঁড়িয়ে আছে। যে কয়টা ধরে একেবারে গোলগাল হয়ে থাকে। অনেক দারুণ কাঁঠাল। গ্রামে এগুলারে নারকেলি কোষের কাঁঠাল বলে। কাঁঠালের জাতের মধ্যে এইটা আলাদা ও ভিন্ন স্বাদের। তো, বৃষ্টিতে এই সকালে কাঁঠাল দিয়ে নাস্তা শুরু করলাম। গ্রামে এমন বৃষ্টির দিনে কাঁঠাল খাওয়ার আমেজে আলাদা। শহরের সব কৃত্রিমতা। গ্রামের মতো এমন সুন্দর প্রকৃতি নেই, নেই বৃষ্টির এমন সুন্দর দৃশ্য। শহরে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালেই দালান আর দালান। এসবে কোন মায়া নেই। যেমনটা গ্রামের মানুষ দেখে এবং উপভোগ করতে পারে।
থেমে থেমে বৃষ্টি শেষ হতেই আবারো ঘনকালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে। শুরু হলো তুমুল বাতাস। বৃষ্টি ও বাতাসে উঠোনের হাস্নাহেনার গাছটা নেতিয়ে পড়লো অনেকটা। বাতাসের তালে তালে ফের বৃষ্টি নেমে এলো। রকিং চেয়ারে দোল খেতে খেতে শীতল বাতাসের পরশে ধূমায়িত চায়ে চুমুক দিলাম। চায়ের এই উষ্ণতা পুরো শরীরটারে জাগিয়ে তুললো নতুন ভোরে। টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টি আমার মনে কেবল ছন্দ বাজায় নানান তালে ও লয়ে। আর মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির সাথে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা দেখছি।
গ্রাম বলতেই চোখে সবুজ প্রকৃতি ভাসে। হৃদয়ে ছুঁয়ে যায় গ্রামের মাটি ও প্রকৃতির মায়া। তার উপর নানান সময়ের ঋতুর বৈচিত্র্যে আলাদা আমেজ ও আবেগ তৈরি করে। নানান ঋতুর মাঝে গ্রামে বর্ষা বেশ উপভোগ করা যায়। মেঘ-বরষায় গ্রামের প্রকৃতি আরো সতেজ ও সুন্দর হয়ে উঠে। এমন বরষা বাদলের দিনে গ্রামে ভীষণ ভালোলাগে। এইভাবে বৃষ্টি দেখে একজীবন পার করে দেয়া যায় গ্রামে।
লেখক- মিজান ফারাবী,কবি ও প্রাবন্ধিক।