আজিমপুর কলোনির দেয়াল ধ্বসে শিশুর মৃত্যু

0 184

নিজস্ব প্রতিবেদক :

গত ৯ নভেম্বর বাবা নাজির হোসেনের সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার পথে আজিমপুর কলোনির দেয়াল ধ্বসে মৃত্যু হয় ৭ বছর বয়সী শিশু জিহাদে হোসেন। আজিমপুর কলোনির পুরাতন দেয়ালের পাশে ‘সুরক্ষা ব্যবস্থা না করেই’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ ড্রেন করায় দেয়াল ধ্বসে পড়ছে বলে অভিযোগ গণপূর্ত অধিদফতরের। অন্যদিকে ডিএসসিসি’র অভিযোগ, দেয়ালের পাশে ১০ বছর ধরেই ড্রেনটি রয়েছে, সম্প্রতি সংস্কার করতে গিয়ে দেয়ালটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখতে পেয়ে চিঠি দিয়ে দেয়ালটি সংস্কার করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সিটি করপোরেশন ও গণপূর্ত অধিদফতর একে অপরকে দোষারোপ করছে, দায় নিচ্ছেনা কেউ।

দুরন্তপনা আর মিশুক স্বভাবের জন্য আজিমপুরের শহীদনগরে সবার পরিচিত জিহাদ। দুরন্ত এই শিশু ঘর থেকে বেরিয়ে প্রায়শই রাস্তায় খেলা করে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তার মায়ের। এ জন্য তাকে সমাজকল্যাণ অধিদফতরের অধীনে ডে কেয়ার সেন্টার ‘ছোট মনি নিবাসে’ ভর্তি করা হয়।  সকালে তার বাবা সেখানে রেখে আসেন, বিকালে কাজ থেকে ফেরার সময় আবার নিয়ে আসতেন। সারাদিন সেখানেই লেখাপড়া, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল জিহাদের। নিরাপত্তার কথা ভেবে জিহাদকে ডে কেয়ার সেন্টারে রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে পারলো না সে। ডে কেয়ার সেন্টারের অদূরেই দেয়াল ধ্বসে মারা গেলো সে।

গণপূর্ত অধিদফতরের আজিমপুর কলোনির সীমানা প্রাচীরটি ইটের তৈরি। কোনোধরনের আরসিসি পিলার ছিল না। আর এ দেয়ালের পাশে ছিল সিটি করপোরেশনের ড্রেন। সীমানা প্রাচীরের দেয়ালটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে জানতো দুটো সংস্থা। তবে কোনও সংস্থাই তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি, হয়েছে শুধু চিঠি চালাচালি। যদিও ‍দুসংস্থার দাবি, কেউ কারও চিঠি পাননি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেয়ালটি কোনও রকমের কংক্রিটের ঢালাই ছাড়া ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনিতে তৈরি। আর সে দেয়ালে গাঁ ঘেষে একটি ড্রেন, সেটিও ইটের গাঁথুনিতে তৈরি। ড্রেনের কোনও অংশে ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি, কোথাও ৫ ইঞ্চি। ড্রেনের পানি লিক করে দেয়ালের কোনও কোনও অংশ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়েছে। দেয়ালের যে অংশটি ধ্বসে পড়ে সেখানে ড্রেনের ৫ ইঞ্চি গাঁথুনি ছিল।

‘দেয়ালটির পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হলে ঝুঁকিপূর্ণ হবে’ উল্লেখ করে ড্রেন নির্মাণ বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেন গণপূর্ত অধিদফতরের পিলখানা গণপূর্ত উপবিভাগের উপ বিভাগী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কায়সার কবির। ২৫ মে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গণপূর্ত ‍বিভাগের অজিমপুর কলোনীতে ৪১৮টি ফ্ল্যাটে সরকারি কর্মচারীরা বসবাস করেন। সম্প্রতি কলোনীর দক্ষিণ পশ্চিম পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ড্রেনের কাজ চলমান। সেই ড্রেনের লে আউট কলোনীর বাউন্ডারি দেয়াল ঘেঁষে করা হয়েছে। এর ফলে দেয়ালের ফাউন্ডেশনসহ সামগ্রিক স্থাপনা হুমকির মুখে পড়তে পারে। যা কলোনীর বসবাসকারী এবং রাস্তার পথচারীদের জন্য হুমকি। এ অবস্থায় অবিলম্বে ড্রেন নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হবে অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে কায়সার কবির বলেন, দেয়ালটি পুরাতন, সেখানে মাটি সরিয়ে নিলে বুঁকিতে পড়বে এটা স্বাভাবিক। ইটের দেয়ালের পাশে এভাবে ড্রেন করা কখনও ঠিক হয়নি। এটা আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

তবে এ চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এমন কোনও চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। আমাদের ড্রেনটি পুরাতন, নতুন করে হয়নি। ড্রেনটি সংস্কার করতে গিয়ে আমরা দেখছি দেয়ালটি ঝুঁকিপুর্ণ এজন্য আমরাই বরং তাদের  চিঠি দিয়ে জানিয়েছি তাদের দেয়াল মেরামত করতে।

গণপূর্তকে ৫ মে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান। সেখানে বলা হয়, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ও ওয়েস্ট ইস্ট স্কুলের কাছে কলোনীর দেয়াল পুরাতন জরাজীর্ণ এবং ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনও সময় ভেঙে পথচারী ও জনসাধারণের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য দ্রুত দেয়ালটি মেরামত করা জরুরি। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী।

তবে এ চিঠি পাননি বলে জানান গণপূর্ত উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কায়সার কবির।

সরেজমিন দেখা যায়, ধ্বসে পড়া দেয়ালের বাকি অংশ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কয়েকজন শ্রমিক মাটি খুঁড়ছেন। ভাঙা অংশ টিনের বেড়া দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

এদিকে বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার পথে দেয়াল ধ্বসে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি পৃথক দুটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ প্রেরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম এবং সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী মো. মুহিদুল কবীর ও মনির হোসেন পৃথক দুটি নোটিশ প্রেরণ করেন। নোটিশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের এ ক্ষতিপূরণ দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.