করোনার চেয়ে ২০ গুণের বেশি মৃত্যু অসংক্রামক রোগে

0 213

করোনার চেয়ে দেশে ১০ থেকে ২০ গুণের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। সংক্রামক রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও সংক্রামক রোগের প্রতি গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়।

দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ মারা যায় অসংক্রামক রোগে। এটিকে গুরুত্ব না দিলে ২০৪০ সালে এই হার ৭০ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশে উঠে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের (এনসিএফআইডি) দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে যোগ দিয়ে তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিনদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গত ২৬শে জানুয়ারি মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে ২৮ শে জানুয়ারি শুক্রবার। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

সম্মেলনের প্রথম পর্বে স্বাস্থ্য অর্থ ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, কোভিডে সারাবিশ্ব এই মুহূর্তে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশে কোভিডে যে মৃত্যু, অসংক্রামক কোনো কোনো রোগে মৃত্যু তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুন বেশি হয়ে থাকে।

“শুধু ধুমপান জনিত কারণেই দেশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে তিনশ মানুষের। ক্যানসার, টিভি, হৃদরোগ এসবই অসংক্রামক রোগ। এগুলোতে আক্রান্ত হয়ে যে মৃত্যুহার দেখা যায়, তা কোভিডে আক্রান্ত মৃত্যুহারের থেকেও ৫ গুণ বেশি। কিন্তু কেন যেন আমরা শুধু সংক্রমক রোগের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি”, আরও বলেন তিনি।

বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এই মুহুর্তে ৮.৪ মিলিয়ন বা ৮৪ মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। সবাইকে পরীক্ষা করলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাদের শুধু ইনসুলিনের জন্য বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শুধু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্য বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারের স্বদিচ্ছার ঘাটতি নেই জানিয়ে শাহাদাত হোসাইন আরও বলেন, “করোনার টিকার জন্য এবার সরকারের ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি তহবিল আছে, সেখান থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে আমরা যদি হিসাব করি তাহলে এটি ১০ ভাগের কাছাকাছি হবে।”

একটি গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৬৭.৫ ভাগ অর্থ জনগণের পকেট থেকে ব্যয় হয়। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এখানেও একটি হিসাব বারবার বাদ পড়ে যায়। যারা সরকারি কর্মচারী রয়েছেন তাদের জন্য সরকার প্রতিমাসে চিকিৎসা ভাতা দেয় দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার পর্যন্ত। এর মোট পরিমাণও ছয় হাজার কোটি টাকা। এটি কিন্তু এই টাকা হিসাবে আনা হয় না।”

গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয় তার ৭০ ভাগই অসংক্রমামক রোগে। এটা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ২০৪০ সালে এই হার হয়তো ৮০ শতাংশে উঠে যাবে।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ)-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (ব্যাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, ওয়ার্ড ওরবেস্টি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জন উইলডিং, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের গবেষণা প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওনুর রহমান, বিএসএমএমইউ’র পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.