আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস

0 199

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড’এর তথ্য মতে, ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বে এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এ সময় বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী। এছাড়াও বাংলাদেশে অন্তত ২১৯টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিপন্ন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ ৩ মার্চ দেশে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলো এ দিবসটি বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে  পালন হয়ে আসছে।  বন বিভাগের এক তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিপন্ন প্রাণীগুলোর মধ্যে আছে উভচর সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী।

এরমধ্যে ৪২ প্রজাতির উভচরের মধ্যে ৮টি, ১৫৮ টি প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে ৬৩টি, ৭৩৬টি প্রজাতির পাখির মধ্যে ৪৭টি, ১২৪টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ৪৩টির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। এখনই যদি বন্যপ্রাণী রক্ষায় ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে এ প্রাণীগুলোসহ অন্যান্য প্রাণী বিপন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে।  ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে ৩ মার্চকে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৪ সালে প্রথম এ দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকুলের প্রতি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে দিবসটি পালন করা হয়।

৫০ বছরে দুই-তৃতীয়াংশ বন্যপ্রাণী কমেছে মানুষের কারণে

বন উজাড় এবং মাত্রাতিরিক্ত ভোগের কারণে গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে বন্যপ্রাণী কমে গেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এই সময়ে ভূপৃষ্ঠের চার ভাগের তিন ভাগ এবং সমুদ্রগুলোর ৪০ শতাংশই মানুষের হানায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

ডব্লিউডব্লিউএফের সবশেষ লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে গড়ে বন্যপ্রাণী কমেছে প্রায় ৬৮ শতাংশ। এর পেছনে ক্রমবর্ধমান হারে বন উজাড় এবং কৃষিক্ষেত্রের বিস্তারকে দায়ী করা হয়েছে।

ডব্লিউডব্লিউএফের আন্তর্জাতিক মহাপরিচালক মার্কো ল্যাম্বারতিনি বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, ৩০ বছর ধরে আমরা ক্রমাগত (বন্যপ্রাণী) হ্রাস পেতে দেখছি এবং এটি ভুল পথে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে আমরা ৬০ শতাংশের পতন দেখেছিলাম, এখন দেখছি ৭০ শতাংশ। এ গ্রহে লাখ লাখ বছর ধরে বেঁচে থাকা অনেক প্রজাতির জন্য এটিকে চোখের পলক ফেলার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে জুয়োলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন। ক্রমাগত প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে বৈশ্বিক মহামারির ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে তারা।

১৯৭০ সালের আগে পরিবেশে মানুষের পদচিহ্ন পড়ত পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ পুনর্জন্ম ক্ষমতার চেয়ে কম। ডব্লিউডব্লিউএফের হিসাবে, মানুষ পৃথিবীর সেই ক্ষমতার চেয়েও এখন বেশি শক্তি ব্যবহার করছে।
প্রতিবেদনে চার হাজারের বেশি মেরুদণ্ডী প্রাণীকে নিয়ে গবেষণা করে ১২৫ জন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, মিঠাপানিতে বসবাসকারী প্রাণীর সংখ্যা কমেছে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮৪ শতাংশ। এরপর সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রজাতির মধ্যে রয়েছে কঙ্গোর গরিলা এবং ঘানার আফ্রিকান ধূসর তোতা।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কোভিড-১৯’র মতো যেসব রোগ বন্যপ্রাণী থেকে মানবদেহে ছড়াতে পারে, সেগুলোর প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম বড় কারণ দ্রুত বন উজাড় হওয়া।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের গ্লোবাল ফরেস্ট প্র্যাকটিসের নেতা ফ্রান প্রাইস বলেন, প্রকৃতপক্ষে এসব রোগকে মানুষ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে বনাঞ্চল। আমরা যত বেশি তাদের ধ্বংস করব এর (রোগের) সম্ভাবনা তত বাড়বে।

তার মতে, পরবর্তী এক দশকে যদি বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক কার্যক্রম যথারীতি চলতে থাকে তাহলে বন্যপ্রাণীর যে ক্ষতি হবে তা পূরণে কয়েক দশক লেগে যাবে এবং কিছু প্রজাতির পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনাও কমে যাবে।
এ কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও টেকসই করতে সরকার ও সংস্থাগুলোকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও বুঝতে হবে, তাদের কেনার অভ্যাস প্রকৃতির ওপর কীরূপ প্রভাব ফেলবে এবং সেক্ষেত্রে তাদের আরও যত্নবান হতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.